দেশের ইতিহাসে প্রায় প্রতিটি নির্বাচন ঘিরেই দেখা গেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর যা সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
নির্বাচনকে ঘিরে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। নির্বাচনের আগে কয়েকটি দলের যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সহিংসতার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। নতুন বিনিয়োগে খরা এবং অর্থনৈতিক সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বায়াররাও এ সময়টাতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যে তাদে যারা আসতে চাচ্ছিল এ সময়ের প্রেক্ষাপটে তারা আসতে চাচ্ছে না। কোনো কোনো বায়ার বা ক্রেতা বলছে ঠিক আছে তোমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসুক, নির্বাচন হোক এরপর আমরা অন্য কিছু চিন্তাভাবনা করি। আবার যারা বিনিয়োগ করবে তারাও অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যায় সেটা বোঝার চেষ্টা করছে।’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় নাই। যদি স্ট্যাবিলিটি নিয়ে আসতে পারতো তাহলে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি হতো। বরং রেকর্ড হয়েছে নিম্নগামীর দিকে। যদি বৈদেশিক ও আমাদের ডোমেস্টিক বিনিয়োগের কথা বলেন তাহলে আমাদের চোখ বন্ধ করে ১৮-২০ বছর পেছাতে হয়।’
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থায়ন সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং রাজস্ব আদায়ের ধীরগতি সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এখন বহুমুখী সংকটে পড়েছে।
সম্ভাবনাময় অনেক শিল্প-কারখানা যেমন অর্থাভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না, তেমনি বহু প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। এমন সময় ফের অস্থিরতা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক ট্রানজিশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হলে দেশের ভেতর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এবং দেশের মানুষ আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনেই দেশ পরিচালনা পছন্দ করেন। যেহেতু একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেটি দ্রুত শেষ করে নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায় সেটি আসলে এ মুহূর্তে জনগণের প্রত্যাশা।’
বিনিয়োগ ও ব্যবসায় আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে জরুরি। শান্তিপূর্ণ সমাধান ও স্থিতিশীল পরিবেশ না এলে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও শিল্পখাতেও ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
অতীতে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশের অর্থনীতিকে যেমন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তেমনি এতে প্রত্যক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।




