শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ড. কামাল সিদ্দিকী ছিলেন প্রশাসন, উন্নয়ন-চিন্তা ও অ্যাকাডেমিক গবেষণার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন একজন সৎ, দূরদর্শী ও নিষ্ঠাবান সরকারি কর্মকর্তা; যিনি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আধুনিকায়নের জন্য কাজ করেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও নীতিনির্ধারক হিসেবে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ড. কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। আমরা প্রায়ই দেশের ভবিষ্যৎ, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতাম। তিনি ছিলেন নীতিবান, বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক এক মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন প্রিয় বন্ধু ও প্রজ্ঞাবান সহযাত্রীকে হারালাম।’
আরও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের বৈরি ও প্রতি-হিংসাপরায়ণ রাজনীতির কারণে তাকে বহুবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। অন্যায়ভাবে একাধিক মামলার হয়রানি তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে—যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। তবুও তিনি কখনও তাঁর মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম থেকে সরে আসেননি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ড. সিদ্দিকী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কিংবদন্তি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি যে নিষ্ঠা, সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে সারা জীবন দায়িত্ব পালন করেছেন, তা বাংলাদেশের সকল সরকারি কর্মকর্তার জন্য অবশ্য অনুসরণীয়।’
‘এটা ভাবতে অবাক লাগে যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে বিএসসি এবং এমএসসি পাস করেছেন, কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছেন। তার জ্ঞান-স্পৃহা ছিল অদম্য,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ড. সিদ্দিকী অসংখ্য গবেষণাভিত্তিক বই লিখে তাঁর পাণ্ডিত্যের প্রোজ্জ্বল পরিচয় রেখে গেছেন। তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনী বাংলাদেশের সমাজ, মানুষ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের একটি আন্তরিক ও অকপট দলিল। বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থে তিনি তার কৌতূহলী মনের সক্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন।’
উল্লেখ্য, ড. কামাল সিদ্দিকী তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হন এবং ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা অ্যান্ড ফাউনা অব বাংলাদেশের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এটির প্রথম খণ্ড ২০০৮ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।





