রাজধানীর উত্তরা। একপাশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অপরপাশে রেলওয়ে স্টেশন থাকায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা থাকে এ স্থানে। বিমান, রেল ও বাস ধরার তাগিদে প্রতিনিয়ত পাঁচ লেনের সড়ক পারার হতে হয় বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে। কিন্তু নির্ধারিত ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও স্থানটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পার হয় পথচারীরা।
প্রশ্ন হলো, মৃত্যুর ঝুঁকি নিলেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে কেন অনীহা পথচারীদের?
পথচারীদের একজন বলেন, ‘আমরা দেখা যায় রাস্তা পারাপার হই অনেক ঝুঁকি নিয়ে। সন্ধ্যার পর এ জায়গায় ছিনতাইকারীর আনাগোনা হয়। সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি শিকার হতে হয়।’
অন্য আরেক পথচারী বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে। বিভিন্ন ব্যক্তিদের আস্তানা এখানে বসে যায়।’
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রায় একশোটির বেশি ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও দখল, নিরাপত্তাহীনতা, ও পরিত্যক্ত হওয়ায় বেশির ভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী। বলাকা সিনেমা হল ও পরীবাগ ব্রিজ ছিনতাইকারী ও ভাসমান যৌনকর্মীদের অভয়াশ্রম। মৎস্য ভবনের ব্রিজটিও গৃহহীনদের হাতে। বিমানবন্দর, ফার্মগেট বনানী, যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি থাকলেও তা অসচল।
এ নিয়ে পথচারীরা জানান, চলন্ত সিঁড়িও ঠিক নেই। ফলে তাদের এ ব্রিজটি ব্যবহারে অনেক ভোগান্তি হয়।
শুক্রাবাদ, পান্থপথ, সায়েন্স ল্যাব ও নিউ মার্কেটের ব্রিজগুলোর ভাঙা সিঁড়ি, হকারদের দখলে। এছাড়া রমনা পার্ক, ও বাংলাবাজারের ফুটওভার ব্রিজগুলোও প্রায় পরিত্যক্তের পথে। নটরডেম কলেজ ও আসাদগেট ফুটওভার ব্রিজে প্রতিনিয়ত ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
আরও পড়ুন:
তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহার হলেও ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মিরপুর-১, কাকলি এবং বনানীর এলাকার বেশির ভাগ বিক্রেতাদের দখলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফুটপাতের এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির পিছনে কাজ করছে বড় শক্তি। যোগসাজশ আছে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদেরও।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাডিউজ্জামান বলেন, ‘এ ফুটপাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ চাঁদার অংশ স্থানীয় যারা রাজনীতিবিদ আছে, প্রভাবশালীরা, অসাধু কর্মকর্তা সবাই জড়িত।’
নগর পরিকল্পনাবিদ অপরিকল্পিত ভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে রাজধানীর একাধিক ফুটওভার ব্রিজ। এ যেমন রাজধানীর আগারগাও থেকে শ্যামলী পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের এক পাশে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল শিশু হাসপাতালে, অপরপাশে নির্বাচন কমিশন ভবন এনবিয়ারসহ অন্তত ১৫টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। অথচ এসব সেবা প্রদানকারী এসব প্রতিষ্ঠান যাতায়াতে সড়কটিতে নেই একটিও ফুটওভার ব্রিজ
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ইচ্ছামতো ওভারব্রিজ করলাম, প্রকল্প শেষ এবং এরপর আর সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। আমরা একটি লুপের মধ্যে পড়েছি, এ লুপের মধ্যে আসলে আমাদের ফুটওভার গুলো ইউজেবল নয়। পুরো বিষয় নিয়ে জনগণের চাহিদা, চাওয়ার সঙ্গে আমাদের যে ট্রাসপোর্ট প্লান তার যে রিলেশন সেটির অভাব বেশি।’
ফুটওভার ব্রিজ গুলোর এমন দশায় নতুন উদ্যোগ নিতে চায় সিটি কর্পোরেশন। মেরামতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে জনবল নিয়োগের আশ্বাস উত্তরের প্রশাসকের।
উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক মোহাম্মাদ এজাজ বলেন, উচ্ছেদ অভিযান অনেকগুলো করেছি। পুনদখল না হওয়ার জন্য আমরা চিন্তা করছি স্ট্যাটেজিক লোকেশনে আমরা ২৪ ঘণ্টা বিডিআর, আনসার দিয়ে পাহারা দেব। এতে দুটি কাজ হবে পুনদখল হবে না আর নিরাপত্তা পাওয়অ যাবে।’





