মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের কাজ কী

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড | ছবি: সংগৃহীত
2

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড (Metrorail Bearing Pad) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা উড়ালপথের পিলার এবং ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো থাকে। এর প্রধান কাজ হলো ট্রেনের ভার বহন করা এবং এই ভারের চাপকে সরাসরি পিলারে না ফেলে সমভাবে মাটির দিকে সঞ্চারিত করে দেয়া। এটি বিশেষ ধরনের রাবার বা ইলাস্টোমেরিক পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়। ঢাকার মেট্রোরেলে ব্যবহৃত প্রতিটি বিয়ারিং প্যাডের আনুমানিক ওজন ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি।

সেতু-স্থাপত্যের নিরবচ্ছিন্ন রক্ষাকবচ

উঁচু সেতু বা উড়াল সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি কাঠামোগত উপাদান অত্যন্ত জরুরি, তার মধ্যে অন্যতম হলো বিয়ারিং প্যাড। বাংলাদেশে মেট্রোরেলের মতো আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে এ উপাদানটি নিরবচ্ছিন্ন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। পিলারের ওপর ভায়াডাক্ট বা রেললাইন বসানোর এ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও নিরাপদ রাখার কারিগর এই প্যাড।

কাঠামোগত স্থিতিশীলতা

বিয়ারিং প্যাডের মূল কাজ দুটি— ভার বহন ও ভার সঞ্চালন। এটি মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট (যে অংশে রেললাইন বসানো থাকে) এবং পিলারের সংযোগস্থলে স্থাপিত থাকে। ট্রেন চলার সময় যে বিপুল উল্লম্ব চাপ তৈরি হয়, তা সরাসরি পিলারে না দিয়ে এই রাবারের তৈরি প্যাডটি সেই চাপকে সমভাবে বিতরণ করে পিলারের মাধ্যমে মাটির দিকে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে কোনো নির্দিষ্ট পিলারে অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হয় না।

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড |ছবি: সংগৃহীত

আরও পড়ুন

এই প্যাডগুলো কেবল উল্লম্ব চাপই নয়, অনুভূমিক সরণ বা চলাচলকেও নিয়ন্ত্রণ করে। মেট্রোরেল যখন দ্রুত গতিতে চলে বা বাঁক নেয়, তখন ভায়াডাক্টে প্রসারণ, সংকোচন এবং সামান্য পার্শ্বীয় নড়াচড়া দেখা যায়। এই নড়াচড়া সাধারণত তাপমাত্রা পরিবর্তন বা ট্রেনের গতির কারণে ঘটে। বিয়ারিং প্যাড তার স্থিতিস্থাপকতার গুণে এই নড়াচড়াকে শোষণ করে নেয়, যাতে ভায়াডাক্ট ও পিলারের কাঠামোতে কোনো ফাটল বা স্থায়ী ক্ষতি না হয়।

কম্পন শোষণ ও ভূমিকম্প সুরক্ষা

আধুনিক বিয়ারিং প্যাডের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো কম্পন শোষণ। মেট্রোরেল চলাচলের সময় (Metrorail operating hours) স্বাভাবিকভাবেই যে কম্পন সৃষ্টি হয়, তা যদি সরাসরি পিলারের মাধ্যমে মাটিতে সঞ্চারিত হয়, তবে কাঠামোর দুর্বলতা বাড়ার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিয়ারিং প্যাড এই কম্পনের বেশিরভাগ অংশ শোষণ করে নেয়। এটি এক ধরনের শক অ্যাবজর্ভার হিসেবে কাজ করে, যা ট্রেনের যাত্রাকে আরও মসৃণ ও আরামদায়ক করে তোলে।

এছাড়াও, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই প্যাডগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। একটি স্থিতিস্থাপক উপাদান হিসেবে এটি ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা বা সরণকে আংশিকভাবে হজম করে নেয়। এটি ভায়াডাক্টকে পিলারের ওপর থেকে সরে যাওয়া বা ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে কাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

নিরাপত্তার প্রশ্ন

বিয়ারিং প্যাডের গুরুত্ব অনস্বীকার্য হলেও, এটি যদি কোনো কারণে খুলে যায় বা স্থানচ্যুত হয়, তবে তা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা সামনে আসায় বিশেষজ্ঞরা নকশাগত ত্রুটি এবং প্যাডের গুণমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত বাঁক স্থানে যেখানে চাপ বেশি তৈরি হয়, সেখানে আরও উন্নত প্রযুক্তির, টেকসই ও অধিক চাপ সহনশীল বিয়ারিং প্যাড ব্যবহার করা প্রয়োজন। এর সঠিক স্থাপন এবং নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ মেট্রোরেলের নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী অপারেশনের জন্য অপরিহার্য। এটি কেবল কাঠামোর রক্ষাকবচ নয়, নিরাপদ যাতায়াত এবং জনসাধারণের সুরক্ষারও প্রতীক।

আরও পড়ুন



এনএইচ