দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট উপদেষ্টাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে এনসিপির আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির সাক্ষাৎ | ছবি: পিআইডি
1

অদক্ষ, দুর্নীতি ও দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ থাকা উপদেষ্টাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ (বুধবার, ২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় চার নেতা। আজ (বুধবার, ২২ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে যমুনায় পৌঁছান। প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠক শেষে তারা যমুনা থেকে বের হন।

আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।

বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে ব্রিফ করেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকে উঠে আসা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

বৈঠক নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এ সাক্ষাতে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি সরকারের সঙ্গে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জুলাই গণহত্যার বিষয়ের বিষয়টা। আমরা আজকে দেখেছি যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অভিযোগের কারণে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে আদালতে আনা হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। সরকার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি আমরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি যে, ন্যায়বিচারের একটি ধাপ আমরা আগাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত আমরা জুলাই সনদ নিয়ে কথা বলেছি। যেহেতু জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে এবং এনসিপি সেখানে অংশগ্রহণ করেনি। ফলে আমরা আমাদের অবস্থান সরকারের কাছে তুলে ধরেছি, ঐকমত্য কমিশনের কাছেও আমরা তুলে ধরেছি। আমরা সে কতাগুলোই পুনর্ব্যক্ত করেছি যে, জুলাই সনদের শুধু কাগজের মূল্যে আমরা বিশ্বাসী নই। ফলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নটা কীভাবে হবে, সেটার সম্পর্কে নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই আমরা স্বাক্ষর করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেক্ষেত্রে জুলাই সনদ আমরা একটা সাংবিধানিক আদেশের কথা বলছি। যে আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান ‍হিসেবে উনি জারি করবেন। কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের যে সার্বভৌম ক্ষমতা সেটার একমাত্র বৈধতা ড. ইউনূসেরই আছে, যেটা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুর নাই। ফলে সাংবিধানিক আদেশ যেটা সংবিধান বহির্ভূত হিসেবে দেয়া লাগবে, সেটা কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট চুপ্পু দিতে পারবে না।’

নির্বাচন কমিশন নিয়ে এ বৈঠকে এনসিপি উদ্বেগ জানিয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া, বর্তমান আচরণ আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, এটা নিরপেক্ষ হচ্ছে না, স্বচ্ছ হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে কার্যক্রম করার কথা ছিল, সেটা করছে না। কিছু কিছু দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে এবং কোনো দলের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ তারা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না হয় এর দায় সরকারের ওপরও আসবে। আমরা নে করি নির্বাচন কমিশন এ মুহূর্তে পুনর্গঠন হওয়া প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন:

জনপ্রশাসন ও উপদেষ্টাদের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান এনসিপির আহ্বায়ক।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জনপ্রশাসন এবং উপদেষ্টা পরিষদ বিষয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছি। জনপ্রশাসনে যেভাবে বদলি, পদায়নগুলো হচ্ছে সেগুলো কীসের ভিত্তিতে দেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন হচ্ছে কী না। কারণ আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি যে, প্রশাসনের বিভিন্ন ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা পরিচিত, তারা নিজেদের মধ্যে প্রমোশন, এসপি, ডিসি ভাগ-বাটোয়ারা করছে।’

তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও তাদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে। ফলে এভাবে চললে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সরকার যেন নিরপেক্ষভাবে ফাংশন করে এবং উপদেষ্টা পরিষদে যাদের বিরুদ্ধে এ সংশ্লিষ্টতাগুলো রয়েছে— অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক দলীয় পক্ষপাতের। তদের বিষয়ে যেন প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেয়।’

এসএস