মাত্র ৬ দিন আগে ১৪ অক্টোবর সকাল ১১টা ১৫ মিনিট। মিরপুরের রূপনগরে গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন লাগে। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হলে মরদেহ শনাক্ত হয় মাত্র ১০ জনের। এ আগুন পুরোপুরি নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।
এ ঘটনার দু’দিন পর (বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রামের কেপিআইভুক্ত এলাকায় আবারও আগুনের ঘটনা। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ইপিজেড এলাকার অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদামে আগুন লাগে। কেপিআই এলাকায় লাগা এ আগুন পুরো ভবনটি পুড়িয়ে ১৭ ঘণ্টার বেশি সময় পর নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রশ্ন ওঠে কেপিআই এলাকার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিয়ে।
এ ঘটনার মাত্র দু’দিন পর (শনিবার, ১৮ অক্টোবর) ফের আগুন। এবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড। হাজার কোটি টাকার গার্মেন্টসসহ শতাধিক রপ্তানি পণ্য পুড়িয়ে ৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এটিও কেপিআই এলাকা।
আরও পড়ুন:
এ তিনটি ঘটনার পরই প্রশ্ন ওঠে একের পর এক আগুন লাগার কারণ নিয়ে। পরিকল্পিতভাবে কেউ এ ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের তরফ থেকে উঠেছে প্রশ্ন। স্ট্যাটাস দেয়া থেকে বাদ যায়নি বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ সাধারণ মানুষ।
৬ দিনের মধ্যে তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে রাজি নয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। নির্বাচন ও গার্মেন্টস শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের পাঁয়তারা হতে পারে এ অগ্নিকাণ্ড, এমনটাই অভিযোগ তাদের।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন্স বিভাগের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ এখন টিভিকে বলেন, ‘এখানে আগুন কখন লাগছে, আপনি সিসিটিভির ফুটেজটি নেন এখানে। এখানে এ ফুটেজ না থাকাও কিন্তু বড় একটি ব্যত্যয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে অ্যালার্ম বাজতো, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকতো। এ ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহলে এটিও অনেক বড় ব্যত্যয়।’
কেপিআইভুক্ত এলাকায় কীভাবে এতো দ্রুত আগুন ছড়ায়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তাদের। দ্রুত কেন আগুন নির্বাপন করা গেলো না— এ প্রশ্নের উত্তরই বলে দেবে ঘটনাগুলি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুল ইসলাম আখন্দ এখন টিভিকে বলেন, ‘কেপিআই এলাকায় সবচেয়ে ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা। এখানে নাশকতা করা খুবই ডিফিক্যাল্ট। অভ্যন্তরীণ কারও যদি সংশ্লিষ্টতা না থাকে আমি বুঝে উঠতে পারি না যে, এখানে কীভাবে আগুন লাগলো। আমি আসলে কমেন্ট করতে পারি না, যে এটি নাশকতা নাকি কেউ করেছে কি না। তবে মনে হয় আমরা সামনে ইলেকশনের দিকে যাচ্ছি এবং এ অস্থিরতা সৃষ্টি করে নির্বাচন পেছানোর কোনো চেষ্টা চালাচ্ছে কি না— তা দেখা উচিত। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি বের হয়ে আসবে।’
তদন্ত করে অগ্নিকাণ্ডের পেছনের ঘটনা দ্রুত তুলে আনতে পারলে নাশকতা অথবা দুর্ঘটনা দুটোই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।





