রঙ তুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠছে দুর্গার রূপ। দেবী দুর্গার সঙ্গে তৈরি হচ্ছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমাও। সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়ায় প্রতিমাকে সাজাচ্ছেন কারিগররা। মান ভালো হওয়ায় পালপাড়ার প্রতিমা জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে নাটোর, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী ও টাঙ্গাইল জেলার মণ্ডপে। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও পূর্বপুরুষের পেশা ও ঐতিহ্য ধরে রাখার কথা জানান কারিগররা।
প্রতিমা কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ঘরে প্রতিমা তৈরি হয়। এ প্রতিমা বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। এ ঐতিহ্য অনেকদিনের। আমার বাবা-দাদার থেকে এ কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিমার কাজের বয়স প্রায় ১০০ বছর হয়ে গেলো।’
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোস কুমার কানু বলেন, ‘আমাদের এবারে ৫১১টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। আমরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সিরাজগঞ্জের নিরাপত্তা বার তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে।’
মণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিরাজগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে আমরা এরইমধ্যে পূজার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা যেন প্রদান করতে পারি সেজন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। পূজা মণ্ডপের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বসেছি, তাদের মতামত নিয়েছি।’
শরীয়তপুরের মশুরা ঘোষপাড়া রাধাগোবিন্দ পূজা মণ্ডপে কারিগররা প্রতিমা সাজাতে বেছে নিয়েছেন সোনালী ধান। শিল্পীদের হাতের এমন কারুকার্য সৌন্দর্য বাড়িয়েছে প্রতিমার। ধান দিয়ে কারুকার্য খচিত প্রতিমা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়।
কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, ‘গতবছর যা প্রতিমা বানিয়েছিলাম এবার তার থেকে দুইটি প্রতিমা বেশি বানিয়েছি। কোনো বাধা প্রভাব নাই।’
আরও পড়ুন:
শরীয়তপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, ‘এবছর শরীয়তপুরে ১০১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এবং প্রশাসন মন্দিরগুলোর কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।’
এদিকে নেত্রকোণায়ও পূজা মণ্ডপে বেড়েছে ব্যস্ততা। আয়োজকরা বলছেন, এবার ছোট বড় মিলিয়ে জেলায় ৫২২টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিমার অলংকার আর শেষ মুহূর্তের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন কারিগররা। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় হতাশ তারা।
কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমার বাবার কাছ থেকে আমি শিখছি। আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করি। এখন তো লোক সংকট, লোক পাওয়া যায়। খরচও পড়ে যায় অনেক।’
জেলায় এবারের পূজায় খরচ ছাড়াতে পারে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশি। আর পূজার আগেই সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসকল ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপ আছে সে জায়গাগুলোতে আমরা ফিক্সড ডিউটির মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধান করবো। পাশাপাশি যেসকল পূজা মণ্ডপে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো আছে সেগুলোতে মোবাইল পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবো।’
দেবী দুর্গার আগমনে সেজেছে বগুড়ার প্রতিটি সনাতন পল্লী। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা সেজে উঠেছে শারদীয় আবহে। দেবী দুর্গার উৎসব আনন্দ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যেন সবাই পালন করতে পারেন এমন প্রত্যাশা ভক্তদের।
ভক্তদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এটি শুধু হিন্দু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সারা বাংলার, সারা জাতির উৎসব। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এতে অংশগ্রহণ করে।’
জেলার সব পূজামণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে নজরদারিতে রাখা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান বলেন, ‘আসন্ন পূজা উৎসবমুখর এবং নিরাপত্তার সঙ্গে পালনের জন্য বগুড়ার পুলিশ ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিচ্ছি।’
এবছর দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আসবেন হাতিতে চড়ে আর পালকিতে ফিরবেন কৈলাসে। দেবী দুর্গা যুগে যুগে অশুভ শক্তির বিনাশ করে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবেন এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের।





