আড়াই মাসে এক সিগন্যালেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ হয়েছে ৪৮ লাখ বার

সড়কে বসানো ক্যামেরা, গুলশান-১ ট্রাফিক সিগন্যাল
সড়কে বসানো ক্যামেরা, গুলশান-১ ট্রাফিক সিগন্যাল | ছবি: এখন টিভি
2

রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর সিগন্যালে শুধু আড়াই মাসেই ৪৮ লাখ বার ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে বিভিন্ন যানবাহন। আইন ভাঙার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গণপরিবহন বাস। কোনো কোনো বাসের বিরুদ্ধে ৩০০বারের বেশি ট্রাফিক আইন ভঙ্গের নজির রয়েছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে ট্রাফিক্স নামের একটি সংস্থার বিশ্লেষণে।

দেশে এখন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করাই যেন আইনে পরিণত হয়েছে। তবে কোন পরিবহন সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে তার সঠিক কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। সম্প্রতি একটি সংস্থা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুলশান-১ সিগনালে কোন পরিবহন সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে তার ওপর কাজ করছে। এতে দেখা যায়, গণপরিবহন হিসেবে বাস সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে।

ঢাকা নগরীর গলার কাঁটা যানজট। যার অন্যতম কারণ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা। সড়কে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই এ আইন ভঙ্গের বাস্তব চিত্র চোখে পড়ে।

গত জুনে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানবাহনকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ট্রাফিক্স নামে একটি সংস্থা নিজ উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে আইন ভঙ্গের সঠিক চিত্র তুলে ধরার কাজ শুরু করে। সংস্থাটি নগরীর গুলশান-১ নম্বর মোড়ে ১০টি ক্যামেরা বসিয়েছে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের চিত্র পর্যবেক্ষণের জন্য। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা পেয়েছে এমন তথ্য। যেখানে দেখা গেছে, ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৪৮ লাখ বার ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে বিভিন্ন যানবাহন।

ট্রাফিক্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাদমান সাদী বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি নিয়ম বঙ্গ করছে বাস। গত তিনমাস ধরে আমরা অ্যানালাইসিস করে এখন পর্যন্ত আমরা ৪৮ লাখের মতো নিয়ম ভঙ্গ করা যানবাহন পেয়েছি। আমরা আমাদের সিস্টেম দিয়ে ই-কেস ফাইন করতে সক্ষম। আমরা চাইলেই ট্রাফিক নিয়ম অমান্যকারীকে আইনের আওতায় আনতে পারবো প্রচলিত আইন অনুযায়ী।’

আরও পড়ুন:

ট্রাফিক্সের এ উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তারা বলছে, নিয়ম ভঙ্গের কারণেই মামলা দায়ের করতে কাজে আসবে এ প্রকল্প।

গুলশান-১ এর পুলিশ ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক) কে এম মেহেদী হাসান বলেন, ‘ই-মামলার ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজে আসবে। কারণ কখন কে নিয়ম ভঙ্গ করছে সেটা তো রেকর্ড থাকবে। রেকর্ড দেখে আমরা প্রসিকিউশনে যেতে পারবো।’

এদিকে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। পাইলট প্রকল্পের ফলাফল ভালো হলে সরকারিভাবে এমন উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে মত তাদের।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ‘যেকোনো ইনোভেটিভ আইডিয়া অবশ্যই প্রথমে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। ঢাকা শহরের মতো একটা জায়গায় সরকারি সংস্থার বাইরে বেসরকারি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে এমন অনেক মেধাবী লোক আছে যারা কাজ করে, তারা এরকম প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসে যেগুলো কার্যকর হতে পারে। কয়েকটি ইন্টারসেকশনে এগুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে পাইলট বেসিসে। তার যে লার্নিং সেটাকে কাজে লাগিয়ে পরে আরও বড় স্কেলে যেতে পারে।’

বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর ট্রাফিক আইন কার্যকর নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে নানান সংস্থা। তবে সমন্বয়হীনতার অভাবে ভেস্তে গেছে সেসব উদ্যোগ। তাই নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রকল্পে স্বাগত জানানো এবং সেগুলো বাস্তবায়নে জোর দেয়া।

এসএস