২৮ এপ্রিল, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগুচ্ছ গ্রামে কৃষি জমিতে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারায় জিহাদ ও ফাহাদ নামের দুই কিশোর। গুরুতর আহত হয় আবু সুফিয়ান নামের আরেক শিশু। শুধু জিহাদ ও ফাহাদই নয়, একই দিনে প্রাণ হারান মোট ২৩ জন। যাদের মধ্যে ১৯ জনই কৃষক।
কয়েক বছর ধরে বেড়েছে বজ্রপাতের মাত্রা, আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে মৃত্যুও। গেল বছর বজ্রপাতে প্রাণ যায় ২৮৮ জনের, তার আগের বছর ২০২৩ সালে ২৮০ আর ২০২২ সালে মৃত্যু হয় ৩১৬ জনের। তবে চলতি বছর মৌসুম শুরুর কয়েক মাসেই মৃত্যু আর হতাহতের ভয়াবহ চিত্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জনমনে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায় মেঘ বেশি নাইট্রোজেন গ্রহণ করছে, ফলে বেড়ে যাচ্ছে বজ্রপাতের ঘটনাও। তবে শহরের চেয়ে গ্রামেই হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনে তাপমাত্রা বাড়ছে, জ্বলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে, সেই হিসেবে আমাদের দুর্যোগের তীব্রতাও বেড়ে যাচ্ছে। যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে, সেখানে হচ্ছেই; যেখানে খরা সেখানে খরা। আর যেহেতু আমাদের ফুয়েল বেশি যাচ্ছে, যেখানে বজ্রপাত হওয়ার কথা সামান্য, সেখানে ফুয়েল বেশি যাওয়ার কারণে বজ্রপাত বেড়ে যাচ্ছে।’
বজ্রপাত নিরোধে বিগত সরকারের সময় শতকোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ লাখ তালগাছ লাগানোর প্রকল্প নেয়া হয়। তবে তা শতভাগ আলোর মুখ দেখেনি। ব্যর্থ হয় স্বল্প পরিসরে লাইটেনিং অ্যারেস্টার লাগানো প্রকল্পটিও। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকল্পগুলো ভেস্তে যায়।
গবেষক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, ‘যদি ঠিক জায়গায় লাগানো হতো তাহলে ২০ বছরে ঐ গাছ অনেক বড় হয়ে যেত। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারিনি। সেটা করার জন্য যে প্রক্রিয়াটা ছিল বজ্রপাত ঠেকানোর জন্য, সেখানে মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা করা হয়নি। যারা এটার ভুক্তভোগী হচ্ছে তারা কেউ জানে না। এখন যখন তালগাছ লাগিয়ে কাজ করছে না, তখন আমরা এখন লাইটেনিং এরিস্টার লাগাবো।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রনিরোধক গাছ কমে যাওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি আঘাত হানছে মাঠের কৃষক ও গবাদিপশুর ওপর।
গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, ‘গাছ লাগানোর চেয়ে আগে আমাদের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। এটা খুবই জরুরি। এরপর গাছও লাগাতে হবে, যেগুলো দ্রুত বর্ধনশীল এবং এগুলো মাঠে লাগাতে হবে।’
বর্জপাতের পূর্বাভাস সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় কমানো যাচ্ছে না এর ক্ষয়ক্ষতি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সচেতনতাই বর্জ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘যারা মাঠে কাজ করে তারা অনেক দূর থেকেই বোঝে যে একটা কালো মেঘ আসছে, বাতাস আসছে। এটাকে পাত্তা দিয়ে তাদের সতর্ক হতে হবে, এই সময়ে ঘরে থাকতে হবে।’
বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার বেড়েছে বজ্রপাত, আর উঁচু গাছপালা কেটে ফেলার কারণে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা এবং সাইক্লোনের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতে সেটি পাওয়া যায় না। তাই ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।