হাসিনা পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক চর্চা শুরু হয়। এরই মাঝে আগে স্থানীয় সরকার নাকি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিপরীতমুখী অবস্থান।
এমন পরিস্থিতিতে, বিএনপি চলতি বছর জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি ভোটমুখী প্রস্তুতিও শুরু করেছে। জনসংযোগ বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে দেশের প্রধান এ রাজনৈতিক দলটি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে দলের এই শীর্ষ নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল- সব পর্যায়ের নেতারা ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সাত দিন সময়ে প্রয়োজন। আমাদের প্রার্থীরা তো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। প্রায় সবাই আগেও কয়েকটা নির্বাচন করেছেন। নির্বাচন আমাদের জন্য নতুন কোনো কিছুই নয়। যারা নতুন রাজনৈতিক দল করেছে তাদের হয়ত নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রস্তুতি দরকার, সময় দরকার। বিএনপির জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।’
দেশের আরেক বড় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে সারাদেশে দলীয় কার্যালয় বন্ধসহ অলিখিত রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞায় ছিল তাদের দল। জুলাই বিপ্লবের পর নির্বাচনী এলাকাগুলোতে কর্মী সভা থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশের মধ্যে দিয়ে জনসংযোগ বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিবাদি সরকারের অত্যাচার, হামলা, মামলা আমাদের কারাজীবন, রিমান্ড আমাদের পাঁচজনকে একত্রিত হতে দেয় নি। ফলে আমরা দীর্ঘদিন থেকে মানুষের কাছে যাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী যারা তাদের যেতে বলেছি। তারা সেখানে যাচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন মিটিং করছেন, সমাবেশ করছেন, কর্মী সম্মেলন করছেন।’
যে সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেসময় বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের মতো পরিচয়বাদী রাজনীতি বাদ দিয়ে দলগুলোর নির্বাচনের প্রস্তুতি হতে হবে জনমুখী। এর সাথে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে দলগুলোকে কথাবার্তায়ও সতর্ক থাকার আহ্বান তাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘নেতাদের কথাবার্তায় একটু সতর্ক হতে হবে। যাতে তারা গোটা জাতির কাছে একটা উল্টা ম্যাসেজ না দেন। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সহিংসতা, কালো টাকার ব্যবহার আমরা এত কিছুর পরে ওই কোনোকিছুই দেখতে চাই না। একটা সুন্দর নির্বাচন চাই।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাফী মো. মোস্তফা বলেন, ‘পলিটিক্যাল রাইভালরি থাকবে। সেখানে যেন ডিহিউমানাইজেশন না আসে। সেখানে যেন আইডেন্টিটি পলিটিকস কাজ না করে।’
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই ভোটের প্রতি নাগরিকদের আস্থা ফিরবে বলে মনে করছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল।