শিক্ষার্থী অরিত্রী আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা: চার মাসেও পৌঁছায়নি অধিকতর তদন্তের আদেশ

বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরিবার

0

রায় ঘোষণা ছয় দফা পেছানোর পর চার মাসেও পিবিআইয়ের কাছে পৌঁছায়নি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রী আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ। এ অবস্থায় মামলার বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার শঙ্কায় সংবাদ সম্মেলন করলেন প্রয়াত অরিত্রী অধিকারীর পরিবার। বুধবার সকালে ঢাকার নিম্ন আদালতে কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অরিত্রীর বাবা অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বাদীকে মামলায় প্রত্যাহারে আসামিপক্ষের আইনজীবী দুদকের তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হেসেন কাজলের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ তুলেন তার পরিবার।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়তেন অরিত্রী অধিকারী। ২০১৮ সালে পরীক্ষা কক্ষে তার কাছে মোবাইল ফোন পাওয়াকে কেন্দ্র করে তার মা-বাবাকে ডেকে অরিত্রীর সামনেই অপমান করে স্কুল-কর্তৃপক্ষ। অরিত্রীকে করা হয় স্থায়ী বহিষ্কার। সেই অপমান-অপদস্থ সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন অরিত্রী।

এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষকের নামে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা করেন তার পরিবার। পরে তদন্ত করে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখা প্রধান জিনাত আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ।

ডিবির তদন্তে উঠে আসে অরিত্রীর সাথে নির্মম ও নির্দয় আচরণের কথা। আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলেও রায় পিছিয়েছে ৬ দফায়। সবশেষ গত ২৫ জুলাই মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন আদালত। এদিকে চারমাস পেরিয়ে গেলেও সেই আদেশের নথি এখনো পিবিআইয়ের কাছে পৌঁছায়নি।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আওয়াল খান ফোনকলে বলেন, ‘হুট করে আপনাকে বলতে পারবো না। তবে আমি খোঁজ করেছি আমাদের কাছে কোনো তথ্য নাই।’

আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় দ্রুত ন্যায় বিচার পেতে সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবা জানান, আপস মীমাংসার মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাজনৈতিক চাপ ছিল তাদের ওপর।

আসামিপক্ষের আইনজীবী তৎকালীন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজলের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারসহ নানা অভিযোগ তুলেন তার বাবা।

অরিত্রী অধিকারীর বাবা দিলীপ কুমার অধিকারী বলেন, ‘একজন বাদী সে তো কোর্টের বারান্দায় এসে প্রতি মাসে, ছয়টা বছর আমার লাগলো। মোশারফ হোসেন কাজল সাহেব আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে যেসব কথা বলেছে বা আমাদের সাক্ষীদের যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

আইনগতভাবে বাধা না থাকলেও রাষ্ট্রের নিয়োগ করা আইনজীবী আসামিপক্ষে নিযুক্ত হলে মামলা ভিন্নখাতে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকে বলছেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী। পাশাপাশি আলোচিত এই মামলার সঠিক বিচার পেতে উদ্যোগ নেয়ায় কথাও জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘পিবি যদি অন্য কোনো মামলায় যায় আসামীপক্ষে, তাহলে অবশ্যই সে মামলা প্রভাবিত হবে। ক্ষমতার সঙ্গে সে সম্পৃক্ত আছে।’

বাদী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট কাজলের সাথে যোগাযোগের করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক আছেন বলেও জানা যায়।

এএইচ