ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ মহসীন হলে ছোট ও মাঝারি অসংখ্য ভূমিকম্প দেখেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক ভূমিকম্পেই খসে পড়েছে রুমের পলেস্তারা, আতঙ্কিত হয়েছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
ভূমিকম্প আতঙ্কে এখন পর্যন্ত অনেকেই হল ছেড়েছেন। যারা আছেন তাদের মাঝেও রয়েছে শঙ্কা। বড় ধরনের ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু হল ভেঙে পড়তে পারে এমন শঙ্কা নিয়েই দিন পার করছেন হাজারো শিক্ষার্থী।
এক শিক্ষার্থী জানান, 'প্রত্যেকটি ফ্লোরের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। শুধু আমাদের মহসীন হল নয়, নতুন দু-একটি হল ছাড়া প্রত্যেকটি হলেরই একই অবস্থা। এ অবস্থায় আমাদের বাসায় পরিবারের সবাই চিন্তার মধ্যে আছেন।'
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকা শহরে বেশিরভাগ ভবনই বড় মাত্রার ভূ-কম্পন সহনীয় নয়। ভূমিকম্পের কথা মাথায় না রেখে ভবন তৈরি না করা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবন বাইরে থেকে সুদৃশ্য হলেও এগুলো ভূমিকম্প সহনশীল কি-না তা নিয়ে থেকে যায় প্রশ্ন। শনিবার (২ ডিসেম্বর) ভূমিকম্পে অনেক ভবনেই ফাটল তৈরি হয়েছে। অনেক ভবনে খসে পড়েছে পলেস্তারা। পরে মেরামত করতে দেখা গেছে এসব ভবন।
ঢাকার পাশে টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চলের নিচেও মধুপুর ফল্ট রয়েছে। এই চ্যুতিরেখায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন ধসে পড়বে- এই তথ্য উঠে এসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক সমীক্ষায়।
'আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প' এর রাজউক অংশের আওতায় ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল সময়ে করা সমীক্ষায় বলা হয়, দিনের বেলায় ওই মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ লাখ ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, 'ভূমিকম্প মোকাবিলায় কেবল শহরে নয় গ্রামাঞ্চলেও সচেতনতা বাড়াতে। ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে সবাইকেই।'
১৮২২ ও ১৮১৮ সালে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ৭.৫ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ক্ষয়ক্ষতির তেমন বর্ণনা পাওয়া যায় না। পরে বছরগুলোতে দেশে ভূমিকম্প হতো গড়ে ২০ থেকে ২৫টি। যা এ বছর ছোট-মাঝারি মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ তে। ফলে বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। শনিবার সকালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে যে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে এর মাত্রা ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ভূ-পৃষ্ঠের লিথোস্ফিয়ারে সিসমিক তরঙ্গে সৃষ্ট কম্পনের ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। ১৯২৩ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল জাপানের কান্টোতে। রিখটার স্কেলে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ১ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ নিহত হয়।
এরপর ১৯৬০ সালে চিলির ভালদিবিয়ায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯.৬। এখন পর্যন্ত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
সবশেষ চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। যাতে মারা যায় প্রাউ ৫০ হাজার মানুষ।




