মো. শরিফুল, একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তেজগাঁওতে পাইকারি বাজারে এসেছেন ডিম নিতে। এই ডিম তিনি তার এলাকার দোকানে নিয়ে বিক্রি করবেন। কিন্তু এক ঘণ্টা ঘুরেও পেলেন না ফার্মের ডিম। একটি দোকানে কোয়েল পাখির ডিম পেলেও সেখানেও বাড়তি গুনতে হচ্ছে শ'প্রতি ৬০-৭০ টাকা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শরিফুল বলেন, ‘আশা করেই আসছিলাম ডিম কিনতে। কিন্তু এখন এসে দেখি ডিম নাই। অনেকদিন ধরেই এমন চলছে। এমন করলে সংসার চালাতে পারবো না।’
এই চিত্র রাজধানীর তেজগাঁও ডিমের পাইকারি বাজারের। গত দুই দিন ধরে ডিম বেচা-কেনা বন্ধ রেখেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। রবিবার রাত থেকেই তেজগাঁও আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি।
তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে তাদের। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। আর সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযানে জরিমানা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের, ফলে ভয়ে তারা মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
ডিম ব্যবসায়ীদের মধ্যে আএকজন জানান, কিছু হলেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ভোক্তা অধিকার নিয়ে যায়। আমরা কতবার ভোক্তা অধিকারকে টাকা দিবো।
দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ডিম আসে তেজগাঁও পাইকারি ডিমের আড়তে। এরপর ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়। ডিম না পাওয়াতে প্রভাব পরেছে সেখানেও।
তেজগাঁও পাইকারি ডিমের আড়তের এক শ্রমিক জানান, কোম্পানিগুলোতে খাবারের দাম বেশি । যার ফলে ডিমের দামও বেশি। খামারিরা লস করে তো আর ডিম বিক্রি করবে না। একটা লেয়ার মুরগির ডিমের পিছনে ১১ টাকা খরচ আছে। আর বাজারে দাম দিয়েছে সাড়ে ১১ টাকা। এখন তারা কি ১০ টাকা করে বিক্রি করবে!
এক দিকে ডিমের দাম বেশি অন্যদিকে বাজারে চাহিদা মত ডিমও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্যতম আমিষের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ক্রেতাদের মধ্যে একজন জানান, আগে দেখা যেত বাচ্চারা সকালে খেত আবার বিকালে নাস্তার জন্য দিতে হয়। এখন বাচ্চাদেরকে তো দিতেই হবে কিন্তু আমাদের ওপর চাপ পড়ে যাচ্ছে।
আরও একজন জানান, এখন তো এত দাম দিয়ে আমাদের ডিম খাওয়া সম্ভব না।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হওয়ার কথা ১৪২ টাকা। তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা ডজন।