স্বর্ণের বাজারের পারদের স্কেল সব ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেছে যেন। প্রতিটি সকালেই ভাঙছে রেকর্ড। এক সময় যে গহনা ছিল নাগালের মধ্যে, এখন তা হয়ে উঠছে কেবল স্বপ্নের অলঙ্কার। ভালোবাসা, বিয়ে, উপহার, সব হিসেবেই স্বর্ণের ঝলক এখন দূর আকাশের তারা।
২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই টানা তিনদিন বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজুসের নতুন ঘোষণায়, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা! ২১ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৪, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৮, আর সনাতনী এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০১ টাকায়।
দাম বাড়লেও বিক্রেতাদের মুখে হাসি নেই। যদিও দোকানে দোকানে এখনও ভিড়। ক্রেতারা তাকিয়ে থাকেন কাচের ভেতর, কিন্তু কেনাকাটা যেন চোখ দিয়েই শেষ!
আরও পড়ুন:
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘বিক্রি একদমই নেই। এখন দেখতে হবে আগামী শীতে বিয়ের মৌসুমে কেমন বেচাকেনা হয়।’
বিক্রেতাদের আরেকজন বলেন, ‘কাস্টমার যেখানে ৫ ভরি বাজেট করেছে স্বর্ণ। সেখানে তারা সেটা নিচ্ছে না। তারা নিচ্ছে দুই ভরি।’
সামনেই পুরোদমে শুরু হচ্ছে বিয়ের মৌসুম। আকাশচুম্বী গয়নার চাহিদা কিভাবে মেটাবে ক্রেতারা? সেই চিন্তায় তাদের কপালে ভাঁজ।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘এই মুহূর্তে স্বর্ণ কেনা সাধ্যের বাহিরেই চলে গিয়েছে।’
তবুও কেউ কেউ কিনছেন, হিসেব করে। কেউ বিয়ের প্রয়োজন মেটাতে, কেউ ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে নিচ্ছেন সামান্য পরিমাণে। কিস্তিতে কিনতে চাইলেও সুবিধা নেই, কারণ প্রতিদিনের দামের ওঠানামায় ঝুঁকি নিতে চায় না বিক্রেতারা।
তবে যাদের পকেট বলছে ‘না’, তারা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন রূপা, সিলভার বা কস্টিউম জুয়েলারির দিকে। রূপার দামও বেড়েছে। ভরিতে ৩২৭ টাকা বেড়ে ২২ ক্যারেটের রূপার দাম এখন ৪ হাজার ৯৮১ টাকা, দেশের ইতিহাসে এটিও সর্বোচ্চ।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, দাম এত বাড়ছে কেন? এর জবাবে বাজুসের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতি, আর সরকারের ভ্যাট-শুল্কের চাপ, সব মিলিয়ে চড়া এখন স্বর্ণ বাজার। বার বার শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিলেও তাতে কান দেয়নি এনবিআর।
বাজুসের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বহুবার প্রস্তাব দিয়েছি শুল্ক কমানোর জন্য তারা কান দেয়নি। যেন আমাদের এখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়।’
বাজুসের দাবি, এই কঠোর নীতির কারণে বাড়ছে স্বর্ণ চোরাচালান। এছাড়া বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের দোলাচল আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সুদহার হ্রাসের প্রত্যাশা, সব মিলিয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকছেন স্বর্ণের দিকেই।
আর সেই ঢেউ এসে লাগছে বাংলাদেশের বাজারেও।





