বাজার
0

খরচের নামে চাঁদা নেয়া বন্ধ থাকায় স্বস্তিতে ঢাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন খরচের নামে চাঁদা নেয়া বন্ধ থাকায় স্বস্তিতে ঢাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের চাওয়া, নির্বিঘ্নে ব্যবসা করার এমন পরিবেশ বজায় রাখার। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়াই হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।

বলা হয় সদরঘাট কখনোই নিরব হয়না। পুরান ঢাকার সকল ব্যবসায় বাণিজ্যের কেন্দ্রে রয়েছে এই সদরঘাট। কিছুদিন আগেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মতোই চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য ছিল এই সদরঘাটেও। ক্ষমতার পালাবদল আর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খরচের নামে যে চাঁদা নেওয়া হতো তা বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ। আর এর পুরোটাই সাফল্যে এসেছে শিক্ষার্থী আর তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে তাদের ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য সবচেয়ে বেশি হয়রানি পোহাতে হয়েছে চাঁদাবাজি আর ব্যবসায়ীক সিন্ডিকেটের কারণে।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘সিন্ডিকেট যদি ভেঙ্গে দেয়া হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে না।’

আরেকজন বলেন, ‘আগে চাঁদা পুলিশকে দিতে হতো, নেতাদের দিতে হতো। আমরা এখন শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ চায়।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী ক্ষুদ্র এসব দোকান থেকে বিভিন্নভাবে চাঁদা তোলা হতো। দোকান প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। শুধু মাত্র সদরঘাট থেকেই প্রতি মাসে চাঁদা উঠতো অন্তত কয়েক কোটি টাকা। যার পুরোটাই চলে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরাদের পকেটে। এর প্রত্যাক্ষ প্রভাব পড়ে পণ্যের দামে। যা বহণ করতে হয় ক্রেতাকেই। তবে বেশ কিছুদিন ধরে একটি টাকাও চাঁদা দিতে হয়নি ব্যবসায়ীদের। কারণ এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে শিক্ষার্থীরা। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘প্রতি রাতে পুলিশ নিতে ২৫০ টাকা, নাইট ডিউটি গার্ড নিতো ২০ টাকা আর কমিশনারের টাকা নিতো। এভাবে চাঁদা দিতে হতো তাদের।’

অন্যদিকে তারা বলছেন, বিগত এক যুগেও তাদের ব্যবসায়ের আকার তেমন একটা বাড়েনি। মূলধন বাড়াতে ব্যাংক থেকে আর্থিক সহযোগীতা নেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা বাঁধা। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ীদের চাওয়া পাওয়ার তালিকায় র্শীষে রয়েছে নির্বিঘ্নে ব্যবসায় করার দাবি।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্তর্বতীকালিন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেশকে দূর্নীতি মুক্ত করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, 'ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে খরচ তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চাঁদা দিতে হয়।'

একদিকে সিন্ডিকেট অন্যদিকে মূলধনের অভাবে আত্মকর্মসস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবসার দিকে ঝুঁকতে অনিহা বেকার জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ। তাই সরকারের কাছে ব্যবসায়ের নতুন ধার উন্মোচনের আশা করে জনগণ।

ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কিছু সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ব্যবসায়ে চাঁদাবাজী মুক্ত হলেও পরবর্তীতে তা কতটা স্থায়ী হবে এ নিয়েছে রয়েছে তাদের শঙ্কা। তবে নতুন সরকারের নিকট আশা হারাতে চাননা তারা।

tech