সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ময়মনসিংহের মেছুয়া বাজারের চিরচেনা চিত্র এটি। সকাল সকাল বাজারে এসে নানা পণ্যের দাম শুনে অস্বস্তিতে পড়েন ক্রেতারা। এছাড়া আসন্ন শবে বরাত এবং রমজান ঘিরে হঠাৎ চড়া মাংসসহ নিত্যপণ্যের বাজার।
বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন জুলহাস উদ্দিন। পরিবারের জন্য বাজার করতে এসে মসলাজাতীয় পণ্য, চিনি, ছোলা, ডাল, গুঁড়ো দুধ কিনতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়তি। আয়-ব্যয়ের হিসেব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার।
ক্রেতারা বলছে, ‘আমরা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি যেহেতু আমরা চাই যে বাজারদরটা একটু কমুক। ছোলা, ডাল, ময়দা, তেল, পেঁয়াজ মোটামুটি এইগুলোর দাম বেশি। '
এক ক্রেতা বলেন, ‘বেতন তো বাড়েনি কিন্তু দ্রব্যমূল্যের যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের সবকিছু কাঁটছাট করে বাজার করতে হচ্ছে।'
ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেটই মাংসের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। দর নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং বাড়ানোর তাগিদ সাধারণ ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'গরু আমদানি কম, তাই বাজার রেট একটু বাড়তি। এক একটি গরুতে ২০-২৫ হাজার টাকা বাড়ছে।'
চট্টগ্রামেও বাড়তে শুরু করেছে বেশকিছু পণ্যের দাম। বিশেষ করে মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ ও ছোলার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
রমজানে ছোলার চাহিদা থাকে ব্যাপক। গেল বছরের তুলনায় এবার সেই ছোলা বেশ বাড়তি দামেই কিনতে হবে ক্রেতাদের। বন্দরনগরীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০২-১০৫ টাকায়। পাশাপাশি বেড়েছে অন্যান্য ডাল জাতীয় পণ্যের দাম। মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১৩৫ টাকা, মুগ ডাল ১৫৫ টাকা আর খেসারির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।
মুদি দোকানি বলেন, ‘৩ হাজার ৭৫০ টাকা মণ ভালো মানের ছোলাটা। আর কেজি প্রতি ১০০ টাকার উপরে কেনা পড়ে যায়। আমরা এনে বিক্রি করবো কত টাকা?’
রোজার জরুরি পণ্য মুড়ি-চিড়ার দামও বেড়েছে। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা এবং চিড়া কিনতে ভোক্তাদের গুণতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি চড়া খেজুরের বাজার। প্রকারভেদে সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
এক খেজুর ব্যবসায়ী জানান, 'খেজুরের দাম এবার অনেক বেশি, এত বেশি দাম যে কাস্টমার জিজ্ঞেসও করে না এত দাম বেশি।'
মুরগি এবং ডিমের বাজারও বাড়তি। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ডজনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। এছাড়া লাফিয়ে বাড়ছে মুরগির দাম। ১০ দিনের ব্যবধানে ১৭০ টাকার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।
ডিম ও মুরগি ব্যবসায়ী বলছে, 'এগুলা বাজার একেক সময় দাম একেক রকম হয় সাপ্লাইয়ের কারণে ডিমের দাম উঠানামা করে আরকি।'
দেশের বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও দাম বেড়েই চলেছে। কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকটকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১০৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ফরিদপুর, পাবনা, রাজশাহী থেকে যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতো ওই পেঁয়াজ নাকি কমে গেছে। সেগুলো ৯০ শতাংশ শেষ, এখন যদি হালের পেঁয়াজ নতুন করে উঠে আসে তাহলে দাম কমে যাবে।'
সিলেটে সবজির আবাদ এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হলেও খুচরা বাজারে দাম বাড়তি। প্রকারভেদে সব ধরনের সবজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
খুলনার বাজারে চড়া মাছের দাম। সব ধরনের মাছ কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ২০০, পাবদা ৪৫০, কোরাল ৫৫০, ট্যাংরা ৬০০ ও ভোলা মাছ বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকায়।
ক্রেতারা জানান, ‘এখন যে মাছের সিজন, এখন তো ঘের সেচার সময় মাছের দাম কম থাকার কথা কিন্তু সেই হিসেবে মাছের দাম বেশি।’
মাছ বিক্রেতারা জানান, ‘শীতের তীব্রতা বেশি, যার জন্য মাছ ধরতে পারছে না। কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেশি।'
বরিশালের বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ছুটির দিনের বাজারে গিয়ে দাম বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে পড়েন ক্রেতারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান ক্রেতাদের।