মূলত ইন্দোনেশিয়ার জাভা দীপে বেড়ে ওঠে বিরল এই মুরগি। নাম আইয়াম চিম্যানি। আইয়াম অর্থ মুরগি আর চিম্যানি মানে সম্পূর্ণ কালো।
আইয়াম চিম্যানি মুরগীর রহস্যময় চেহারা ও বৈজ্ঞানিক কারণ (The Black Mystery)
বাস্তবে এই মুরগি দেখতে একদমই কালো। তবে কাকের মতো নয়। এর রঙ উজ্জ্বল কালো। এই মুরগির হাড়, মাংস, এমনকি জিহ্বা- সবই কালো। শুধুমাত্র রক্ত অন্যান্য প্রাণীর মতোই লাল।
তবে কেনো এই মুরগির সব অঙ্গপ্রতঙ্গ কালো? বিজ্ঞানীরা বলেন, ফাইব্রোমেলানোসিস নামের জেনেটিক মিউটেশন থেকে এই মুরগির রং কালো হয়ে থাকে। অন্যান্য জাতের মুরগির গায়ের রঙের জন্য শুধুমাত্র কয়েকটি কোষ দায়ী। আর আইয়াম চিম্যানির পুরোপুরি কালো হওয়ার পেছনে কারণ হলো, এর প্রায় সব কোষের পিগমেন্টেশন।
যুক্তরাষ্ট্র, চায়না, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নানা মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার এই মুরগি সংগ্রহ করেন। অনেকে এর বাচ্চা কিনে লালন পালন করেন। পুরো মুরগি কালো হলেও এই মুরগির ডিম কিন্তু কালো নয়। সাধারন ডিমের মতোই এর রঙ।
আইয়াম চিম্যানি মুরগীর অবিশ্বাস্য মূল্য ও বিশ্বজুড়ে চাহিদা ,(Ayam Cemani Price)
ইন্দোনেশিয়ায় এই মুরগির সর্বোচ্চ দাম দুই হাজার থেকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় যা দুই লাখ থেকে ছয় লাখ টাকার বেশি পর্যন্ত হতে পারে। প্রতিটি ডিমের দাম ১৬ ডলার যা ১৬০০ টাকার বেশি।
ইন্দোনেশিয়ার বাইরে একেক দেশে একেক দামে বিক্রি হয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রে যদিও আইয়াম চিম্যানি ২০০০ থেকে ৩০০০ ডলারে বিক্রি হয়। তবে ভালো মানের মুরগি ৯ থেকে দশ হাজার ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে ভালো মান বোঝা যায় মুরগির মুখ ও জিহ্বা কতটা কালো তা দেখে। যত কালো তত ভালো।
খুবই শান্ত ও অনুগত স্বভাবের এই মুরগির এতো বেশি দামের মূল কারণ মূলত এর মাংস। চর্বিহীন এই প্রাণীর মাংসের স্বাদ জাদুকরী।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই মুরগির মাংসে আছে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন
আইয়াম চিম্যানি মুরগীর জাদুকরী স্বাদ ও স্বাস্থ্যগুণ (Ayam Cemani Meat Benefits)
সাধারণ মুরগির মাংসের চেয়ে এই মাংসে আছে অনেক বেশি প্রোটিন। যার কারণে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এটি অনেক বেশি পছন্দ করেন। এছাড়াও ভিটামিন এ ডি ই, আয়রন ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টিগুণ আছে এতে। আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
শুধুমাত্র খাবার হিসেবেই নয়, এই মুরগির বিভিন্ন অংশ ওষুধ ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হয়। ইন্দোনেশিয়ানদের অনেকে এটিকে দামী পোষা প্রাণী হিসেবে বাড়িতে পুষে থাকেন।
ইন্দোনেশিয়ার অনেকে মনে করেন, এই মুরগির প্রথম ডিম খেলে সন্তানধারণ হয়
আইয়াম চিম্যানি মুরগীর নিয়ে বিশ্বাস ও জটিলতা (Beliefs and Complex Care)
প্রাণীটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, কালো রঙের কারণে এরা সুপারন্যাচারাল ক্ষমতার অধিকারি এবং পৃথিবীব্যাপী বিচরণ করতে পারে। এই মুরগির প্রথম ডিম খেলে সন্তানধারণ হয় বলেও স্থানীয়দের বিশ্বাস। তবে কোনো দম্পতি চাইলে প্রথম ডিমটি টাকা ছাড়াই তাদের দিয়ে দেন ইন্দোনেশিয়ানরা।
বিভিন্ন ওষুধের কাজে এই মুরগি ব্যবহার করা হলেও তার নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। এটি অসুস্থ্য হলে কালো রঙ ধীরে ধীরে বিবর্ণ হতে শুরু করে। তাই এই মুরগিকে সুস্থ্য রাখতে হলে অবশ্যই খুব সাবধানে এবং যত্ন সহকারে লালন পালন করতে হয়। সাধারণত ৬ থেকে ৮ বছর বাঁচে এই প্রাণী।
এই মুরগির পালনও বেশ কষ্টসাধ্য এবং জটিল। এরজন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি মুরগির সঠিক জোড়া। সঠিক জোড়া না হলে তাদের মাধ্যমে অন্য জাতের মুরগির জন্ম নিতে পারে। যার রঙ কালো না হয়ে সাদা কিংবা অন্য রঙেরও হতে পারে।
দামি মুরগি 'আইয়াম চিম্যানি' নিয়ে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর- FAQ
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি (Ayam Cemani) মুরগি কেন এত দামি? (Why is the Ayam Cemani chicken so expensive?)
উত্তর: এর মাংসের জাদুকরী স্বাদ, চর্বিহীন উচ্চ প্রোটিনযুক্ত স্বাস্থ্যগত গুণ এবং ফাইব্রোমেলানোসিস নামক বিরল জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এর সব অঙ্গ কালো হওয়ায় এর চাহিদা ও দাম অত্যন্ত বেশি।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি মুরগির মাংসের দাম কত? (What is the price of Ayam Cemani chicken meat?)
উত্তর: ইন্দোনেশিয়ায় একটি মুরগির দাম প্রায় দুই হাজার থেকে ছয় হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ২ থেকে ৬ লাখ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। উন্নত মানের মুরগি যুক্তরাষ্ট্রে ৯ থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়।
প্রশ্ন: এই মুরগিটির মাংসের রঙ কি? (What is the color of this chicken's meat?)
উত্তর: আইয়াম চিম্যানি মুরগির মাংস, হাড়, এমনকি জিহ্বা পর্যন্ত সম্পূর্ণ কালো রঙের হয়।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি মুরগির কালো হওয়ার কারণ কী? (What is the reason for Ayam Cemani chicken being black?)
উত্তর: ফাইব্রোমেলানোসিস (Fibromelanosis) নামক একটি বিরল জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এর শরীরের প্রায় সব কোষে অতিরিক্ত মেলানিন (পিগমেন্টেশন) তৈরি হয়, ফলে এটি পুরোপুরি কালো দেখায়।
প্রশ্ন: এই মুরগির উৎস কোথায়? (What is the origin of this chicken?)
উত্তর: এই বিরল জাতের মুরগির উৎস হলো ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি মুরগির ডিমের রঙ কি কালো? (Is the color of Ayam Cemani chicken eggs black?)
উত্তর: না। এই মুরগির ডিম সাধারণ ডিমের মতোই, এর রঙ কালো নয়।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি শব্দের অর্থ কী? (What is the meaning of Ayam Cemani?) উত্তর: 'আইয়াম' অর্থ মুরগি এবং 'চিম্যানি' অর্থ সম্পূর্ণ কালো।
প্রশ্ন: কালো হলেও এই মুরগির রক্ত কি কালো? (Is the blood of this chicken black, even though it is black?)
উত্তর: না, এই মুরগির শরীরের অন্যান্য অংশ কালো হলেও এর রক্ত অন্যান্য প্রাণীর মতোই লাল রঙের হয়।
প্রশ্ন: এই মুরগি কি শুধুমাত্র খাবার হিসেবেই ব্যবহার হয়? (Is this chicken used only as food?)
উত্তর: না। খাবার ছাড়াও এর বিভিন্ন অংশ ঐতিহ্যবাহী ওষুধ এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি মুরগির পুষ্টিগুণ কেমন? (What are the nutritional benefits of Ayam Cemani chicken?)
উত্তর: এতে সাধারণ মুরগির চেয়ে বেশি প্রোটিন, কম চর্বি এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ডি, ই, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
প্রশ্ন: এই মুরগি কত বছর বাঁচে? (How long does this chicken live?)
উত্তর: সাধারণত এই প্রাণীটি ৬ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি পালন কি সহজ? (Is it easy to raise Ayam Cemani?)
উত্তর: না। এটি পালন বেশ কষ্টসাধ্য ও জটিল কারণ এর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এবং সুস্থ রাখতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
প্রশ্ন: আইয়াম চিম্যানি কেন ইন্দোনেশিয়ার বাইরে এত বেশি দামে বিক্রি হয়? (Why is Ayam Cemani sold at such a high price outside Indonesia?)
উত্তর: বিরলতা, জাদুকরী স্বাদ এবং বিশেষ জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, চায়না ও ইউরোপে এর চাহিদা অনেক বেশি।
প্রশ্ন: ভালো মানের আইয়াম চিম্যানি চেনার উপায় কী? (How to identify good quality Ayam Cemani?)
উত্তর: মুরগির মুখ ও জিহ্বা কতটা কালো, তা দেখে এর ভালো মান বোঝা যায়। যত কালো, তত ভালো মান হিসেবে বিবেচিত।
প্রশ্ন: স্থানীয় ইন্দোনেশিয়ানদের মধ্যে এই মুরগিকে নিয়ে কোনো বিশেষ বিশ্বাস প্রচলিত আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ। অনেকে মনে করেন, কালো রঙের কারণে এটি সুপারন্যাচারাল ক্ষমতার অধিকারি। এছাড়াও এর প্রথম ডিম খেলে সন্তানধারণ হয় বলেও স্থানীয়দের বিশ্বাস।




