যদিও বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের প্রচলনের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ইতিহাস ও সাহিত্যের নানা সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামবাংলায় পান্তাভাত খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। কাঁচা মরিচ-পেঁয়াজ দিয়েই লোকে পান্তা খেয়ে উঠত। অনেক সময় মানুষ পান্তা খেতো শুধু লবণ মাখিয়ে। আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা ভাত সাধারণত পরদিন সকালে পান্তাভাত হিসেবে খাওয়া হতো।
গরমে রোদে কাজ করার জন্য কৃষকের উপযোগী খাদ্য ছিল এই পান্তাভাত। সূর্য ওঠার পরপরই পান্তাভাত খেয়ে কাজে বের হতো কৃষক। এর সঙ্গে কখনো কখনো যোগ হতো বেগুনপোড়া, আলুসেদ্ধ। মাঝে মাঝে আবার পান্তাভাতের সঙ্গে যুক্ত হতো মাছের তরকারি। যেমন- ছোট চিংড়ি, ট্যাংরা, পুঁটি।
আবহমানকাল থেকেই মেলা, হালখাতাসহ নানাভাবে পহেলা বৈশাখে উদযাপন করে আসছে বাঙালি। নববর্ষ উপলক্ষে দিনটিতে ঘরে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজনও থাকতো। তবে পান্তা-ইলিশ কখনোই পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ ছিল না। এর প্রচলন আশির দশকের দিকে।
জানা গেছে, আশির দশকের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সুযোগটি গ্রহণ করেন। নিজেদের আগ্রহে অস্থায়ী দোকান দিয়ে পান্তাভাত আর ভাজা ইলিশ বিক্রি শুরু করেন তারা।
পান্তাভাত হাজার বছরের বাঙালির প্রাত্যহিক খাদ্য। আর ইলিশ বাঙালীর অনেক পছন্দের একটি মাছ। মাটির জিনিসপত্র গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এই ধারণাকে পুজিঁ করে পান্তা-ইলিশকে জনপ্রিয় করে তুলেন তারা। যদিও মাটির সানকিতে পান্তা-ইলিশ একসাথে খাওয়ার ঐতিহাসিক কোনো সূত্র নেই। বলা যায় বাংলা বর্ষবরণের নাগরিক রুচিতে নতুন সংযোজন মাটির সানকিতে পান্তা-ইলিশ।
তবে শহরের মানুষ যা নিয়েই মত্ত থাকুক না কেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ নতুন বছরের প্রথম দিনে সাধ্যমতো ভালো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন। এদিন সকালে তারা মিষ্টি খেয়ে দিন শুরু করেন।
বাংলার ঐতিহ্য নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন এমন অনেকের মতে, বৈশাখ অর্থাৎ এপ্রিল মাস জাটকা ইলিশের নদী থেকে সাগরে ফিরে যাওয়ার সময়। তাই জাটকা নিধন রোধে এসময় সরকারিভাবে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। ট্রেন্ডে গা ভাসাতে গিয়ে আমরা অনেকেই ভবিষ্যতের ইলিশগুলোকে শেষ করে দিচ্ছি। তাই পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার ব্যাপারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার পক্ষে মৎসবিদসহ সংশ্লিষ্টরা।