জীবনযাপন
0

প্রায় ১০০ বছর পার করেছে ঢাকার কাবাব

পুরান ঢাকায় কাবাবের যাত্রা পার করেছে প্রায় ১০০ বছর। ভিন্ন স্বাদের কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েছে কাবাবের জনপ্রিয়তা। পুরান ঢাকা, মিরপুর আর মোহাম্মদপুর হয়ে উঠেছে কাবাবের তীর্থস্থান।

পোড়া মাংসের ঘ্রাণ পথচারীর জিভে জল আনে। টেনে নিয়ে আসে কাবাবের কারখানায়, যেখানে তৈরি হচ্ছে বাহারি স্বাদের কাবাব। কিন্তু কোন কাবাবের স্বাদ নেয়া হবে? এ নিয়ে যেমন সংশয়? তেমনি মুশকিলে পড়তে হয়।

আদিম মানুষ যখন মাংস পুড়িয়ে খেতে শুরু করলো তখন থেকেই এ স্বাদু খাবারের আত্মপ্রকাশ। মানুষ যখন অরণ্যের অলংকার মশলার সঙ্গে পরিচিত হলো, তখন নিজেদের মতো করে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে নেয় এর স্বাদ। জনপদভেদে সেই প্রক্রিয়া আজও চলমান আছে।

যিশুখ্রিস্ট আসার কুড়ি শতাব্দিরও আগে কাবাব তৈরির আভাস মেলে। তবে কাবাব ঝলসানো চমক দেখাতে পেরেছিলো তুর্কিরা। তাদের তলোয়ারের ডগায় করেই কাবাব এলো ভারত উপমহাদেশে। ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কাবাবেরও বিস্তার ঘটেছে রকমারি নাম ও রূপে।

ঢাকা এ বিস্তার থেকে মোটেও বঞ্চিত হয়নি। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকা কাবাবের জন্য বিখ্যাত। পুরান ঢাকায় কাবাবের যাত্রা পার করেছে প্রায় ১০০ বছর। আদি দোকানগুলো খোলস বদলে হয়েছে নতুন। সময়ের সাথে সাথে নামেও এসেছে পরিবর্তন। সবচেয়ে পুরনো ও বিখ্যাত দোকানটির বয়সও প্রায় ৫০ বছর। ঢাকার বাংলামোটরের দারুল কাবাব উঠে গেছে দশক চারেক আগেই। তবে নাজিরা বাজার যেন কাবাবের মহল্লা। বিসমিল্লাহ কাবাবের স্বাদ নিতে ছুটে আসে বাংলাদেশে থাকা অনেক বিদেশিরাও।

প্রতিদিন বাহারি রকমের কাবাব খেতে ভিড় করেন ভোজনরসিকরা। ছবি: এখন টিভি

এক বিদেশি নাগরিক বলেন, 'কাবাব ও অন্যান্য খাবারের জন্য ঢাকা খুবই বিখ্যাত একটা শহর। আমি তুর্কি থেকে ঘুরতে এসেছি। এ খাবারের সঙ্গে আমার খুব সম্পৃক্ততা আছে। তাই এখানে আসা।'

মোহাম্মদপুরের মোস্তাকিমের কাবাব রসনা তৃপ্ত করছে প্রায় ৪০ বছর ধরে। বিহারি ক্যাম্পের পাশে ছোট টেবিল-চেয়ারে যার যাত্রা শুরু। এখন জায়গাটি কাবাবের দোকানে ছেয়ে গেছে। অনেকেই পরিবার বন্ধু নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মোস্তাকিমের কাবাব খেতে।

এক ভোক্তা বলেন, 'প্রায় ২৮ বছর যাবত দেখছি। ধীরে ধীরে ওদের ব্যবসা উন্নত হয়েছে। এখন সবগুলো দোকান বেশ ভালো চলে। কিন্তু উনারা শুরুটা করেছে। শুরুতে একটা বিফচপের দাম ছিল ১৫ টাকা। এখন দাম প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের কারণে। মুস্তাকিমের পর থেকেই এ এলাকা জনপ্রিয় হয়।'

মিরপুরে ৫৪ বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে শওকতের কাবাব। ১৫ ধরনের কাবাবের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় গুলি কাবাব। মিরপুরের কাবাব প্রেমীদের প্রথম পছন্দ বেনারসি পল্লীর এ কাবাবঘর।

২৫ বছর ধরে এখানে কাবাব খেতে আসেন এক ক্রেতা। জানান, সুযোগ পেলেই এখানে কাবাব খাওয়া হয়।

তবে কাবাবের ইতিহাস আরও পুরনো। শুধু পুরান ঢাকা ও মিরপুরই নয়, কাবাব পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধে মাতোয়ারা ধানমন্ডি, গুলশানসহ দেশের নানা প্রান্ত। পোড়ানোর সঙ্গে বাঙালির জিভে এখন পোড়ানো মাছের স্বাদ। স্বাদের যতই রূপান্তর ঘটুক, পোড়ার আদি সেই স্বাদ থেকে জিভ সরাতে পারেনি মানুষ।