লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে লামিয়ার নিথর মরদেহ। আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম যে বাবা, সেই বাবার রক্তের বিনিময়ে বৈষম্যহীন এই দেশে লামিয়া হয়তো স্বপ্ন বুনেছিলো মুক্ত স্বাধীন আকাশে উড়বার।
অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লামিয়ার সে ডানা যেন কাটা পড়ে বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে। নানাবাড়ি যাবার পথে পটুয়াখালীতে গেল ১৮ মার্চ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন লামিয়া।
ঘটনার পর থেকেই মারাত্মক মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। সামাজিক লজ্জা, চাপ ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশা ঘিরে ধরে তাকে। সেই চিকিৎসা নিতেই মায়ের সাথে ঢাকায় আসে লামিয়া। তবে চাপ সহ্য করতে না পেরে গতকাল (শনিবার, ২৬ এপ্রিল) রাত দশটার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ভাড়া বাসায় তার নিজকক্ষে গলায় ফাঁস দেন।
উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় স্বজনরা জানান, মামলা হলেও ধর্ষকদের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা প্রত্যাহার করতে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে।
স্বজনদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আসামিদের পরিবার অনেক প্রভাবশালী, ১ নম্বর আসামির দুই মামা উকিল। তারা যেভাবেই হোক বের করে নেবে, এরকমই বলেছে তারা। আর মূলত হুমকি-ধামকি দেয়ার কারণেই এরকম হয়েছে।’
আজ (রোববার, ২৭ এপ্রিল) সকালে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনের পর লামিয়ার মরদেহ নিয়ে আসা হয় মর্গে। সেখানে উপস্থিত স্বজনেরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানান।
স্বজনদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আজ ঐ ধর্ষণের যদি ঠিকঠাক বিচার হত, যে রক্তের বিনিময়ে আজ এই বিপ্লবী সরকার এসেছে তারা যদি এটার সুষ্ঠু বিচার করত তাহলে হয়তো এই তাজা প্রাণ ঝরে এরকম কিছু করার সিদ্ধান্ত নিত না।’
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে জুলাই আন্দোলনে স্বামী আর এখন আদরের কন্যা লামিয়াকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন লামিয়ার মা।





