সহিংসতায় বিপর্যস্ত হাইতি; বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৩ লাখ মানুষ

আসিফ হোসেন
প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন হাইতি অধিবাসীরা
প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন হাইতি অধিবাসীরা | ছবি: রয়টার্স
0

সহিংসতায় বিপর্যস্ত ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ হাইতিতে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে তারা আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে দেশটির রাজধানী পোর্ট অ প্রিন্সের বিভিন্ন গির্জা ও স্কুলে। শুধু বাস্তচ্যুতি নয় তীব্র খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিসহ নানান মানবিক সংকটে ভুগছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ। আগামী দিনগুলোতে এই সমস্যা আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা।

গেল কয়েক দশক ধরেই দারিদ্র্য, সহিংসতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতি। ২০২১ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইস কে তার বাড়িতে ঢুকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

মোইস হত্যাকাণ্ড হাইতিতে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে এবং দেশটির শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে। আর সেই সুযোগেই বিভিন্ন গ্যাং তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।

২০২৪ সালে হাইতির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সের প্রধান কারাগারে হামলা চালায় গ্যাং সদস্যরা। এসময় কারাগার থেকে পালিয়ে যায় কয়েক হাজার কয়েদি। এরপর থেকেই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে গ্যাংয়ের সদস্যরা। দেশটির বিভিন্ন শহরের দখল নিতে শুরু করে তারা। ফলে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করে হাইতির সাধারণ মানুষ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে হাইতিতে ১৩ লাখ মানুষ নিজ দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গৃহহীন এই মানুষগুলো দেশটির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সের বিভিন্ন গির্জা ও স্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সেখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।

এক অধিবাসী বলেন, ‘ওরা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ডাকাতরা এসে আমাদের সবাইকে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে। ওরা ঘরে ঢুকে বহু মানুষকে হত্যা করেছে।’

আরেকজন বলেন, ‘আপাতত আমার কাছে কিছুই নেই এবং কোনো সাহায্যও নেই। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখানে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।’

কেবল বাস্তচ্যুত হওয়া নয়, তীব্র খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে ভুগছে দেশটির প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। আর ১৯ লাখ মানুষ জরুরি পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন আইপিসি বলছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আগামী মাসগুলোতে ৫৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

এএইচ