মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে যেন কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও বলেছেন, গাজা পুনর্গঠনের জন্য এই উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে ভূখণ্ড দখলে নেবেন। জর্ডানের রাজার সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, এতেই মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবারের মতো শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। যদিও নমনীয়ভাবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জর্ডানের রাজা বলেন, মিশরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় আরব বিশ্ব।

গাজার ছোট্ট এই ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে গেলে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। যে ফিলিস্তিনিরা এই ভূখণ্ডে আছেন, তারা অন্য কোথাও শান্তিতে থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন। শনিবারই হামাসের জন্য ডেডলাইন।

ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আরব বিশ্বের দাবির মধ্যে জর্ডানের রাজার সঙ্গে দেখা করে আবারও এসব মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেন, হামাসকে বন্দিদের মুক্তি দেয়ার যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ব্যর্থ হবে। এরপর যুদ্ধবিরতি আর বহাল থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখলে নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে এই ভূখণ্ড উন্নত করবে। আবারও বলেন, ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিতে পারে মিশর এবং জর্ডানে।

ট্রাম্প বলেন, ‘খুব জটিল বিষয় নয়, এই ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করবে, আপনারা পাবেন শান্তিপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য। ফিলিস্তিনিরা অন্য কোথাও নিরাপদে থাকবে। কেউ তাদের ওপর হামলা করবে না। এই ভূখণ্ড কিনে নেয়ার প্রয়োজন নেই। গাজা নেবো আর পুনর্গঠন করবো। এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠবে না । শনিবার চূড়ান্ত সময় । অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে। ফিলিস্তিনিদের জর্ডান আর মিশর আশ্রয় দিতে পারে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্যের ঠিক আগমুহূর্তে জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৌদি যুবরাজ আর মিশরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

কিং আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মাথায় রাখতে হবে মিশর আর আরব বিশ্বের গাজা পুনর্গঠন নিয়ে পরিকল্পনা আছে। রিয়াদে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এমন কিছুই করবো যা সব দেশের জন্য ফলপ্রসূ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও। মিশর তাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে । কিভাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠন করা যায়। বিশ্বাস করি, প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কেউ কাজ করবে।’

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারো গাজা দখল আর যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার আত্মবিশ্বাসী বক্তব্যে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন জর্ডানের রাজা। বারবারই বলে যান, মিশর আর সৌদি আরবের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাজা ইস্যুতে কাজ করতে আগ্রহী তারা। বৈঠক শেষে ট্রাম্প সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, হামাসের হাতে বেশি সময় নেই। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, স্বায়ত্তশাসিত এই ভূখণ্ড কোন ক্ষমতাবলে তিনি অধিগ্রহণ করবেন, জবাবে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাবলে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি হুমকি দিচ্ছি না। জর্ডান আর মিশরকে অর্থায়ন করছি। গাজা যুদ্ধ বিধ্বস্ত উপত্যকা, কিনে নেয়ার কিছু নেই। এই উপত্যকাকে দখলে রাখবো, উন্নত করে দেবো। গাজায় হাসপাতাল, হোটেল, অফিস সব থাকবে । যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাবলে গাজা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হামাসের হাতে কয়েক সপ্তাহ সময় নেই। কয়েকদিন সময় আছে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়ে গেছে। ট্রাম্প আর নেতানিয়াহুর বন্ধুত্ব বড় ধরনের সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে। উপত্যকা নিয়ে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করেই যাচ্ছেন ট্রাম্প আর নেতানিয়াহু।

মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, শনিবারের মধ্যে সব ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি না দিলে গাজায় যুদ্ধবিরতি আর কার্যকর থাকবে না। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালাতে থাকবে।

বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেবিনেটে ৪ ঘণ্টার আলোচনা শেষ হলো। শনিবার মুক্ত হওয়া তিন বন্দির অবস্থা থেকে রাগে দিশেহারা আসরা। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। হামাস চুক্তি ভঙ্গ করেছে, বন্দিদের মুক্ত করেনি। সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি গাজা উপত্যকায় চলে যেতে। এবার অপারেশন সফল হবে। হামাস যদি শনিবারের মধ্যে বন্দিদের মুক্ত না করে, যুদ্ধবিরতি শেষ হবে। হামাসের বিরুদ্ধে ততদিন যুদ্ধ করবো, যতদিন পর্যন্ত হামাস শেষ না হয়।’

এদিকে, মিশরের পরিকল্পনা, জর্ডান আর সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে গাজা পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেবে কায়রো। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হবে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গাজা ইস্যুতে কাজ করতে আগ্রহী মিশর।

এএইচ