ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ, বহুমুখী বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশে বহুমুখী বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে ৪ মার্চ থেকে। এতে, পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানোর আভাস দিয়েছে ইউরোপ। ফলে, বিপাকে পড়েছেন ইস্পাত শিল্পের শ্রমিকরা। এদিকে, আগামী দুইদিনে আরও বেশ কয়েকটি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বাণিজ্য বাধার দেয়াল আরো উঁচু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার নির্দেশ দিলেন তিনি। আগামী ৪ মার্চ থেকে এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ধনী বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হলো। ট্রাম্পের দাবি, শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টি তিনি সহজ করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্কারোপের বিষয়টি সহজ করেছি। যাতে সবাই এর অর্থ বুঝতে পারে। কোনো ব্যতিক্রম ও ছাড় বাদেই ২৫ শতাংশ কার্যকর হবে। বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকেই আমদানির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরে তৈরি পণ্যে শুল্ক ধার্য হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ টন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে এসব দেশকে এখন ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিতে গুণতে হবে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক। এতে বিপাকে পড়েছেন ইস্পাত শিল্পের শ্রমিক ও মালিকেরা। আমদানি নির্ভর মার্কিন ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের মধ্যে থাকলেও, ট্রাম্প জানান, এতে লাভবান হবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান।

এদিকে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিতে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। যদিও, মার্কিন এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ইউরোপে বাজার রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানার তারা।

তবে অস্ট্রেলিয়ার ওপর শুল্কারোপের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনালাপের পর এ সিদ্ধান্ত হয়। ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়েও আশাবাদী আলবানিজ।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে ট্রাম্পের কাছে শুল্কের অব্যাহতির দাবি তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে আমরা দুই দেশই একমত হয়েছি। উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষায় শুল্কারোপ অব্যাহতির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে রাজি হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’

এদিকে, অটোমোবাইল, ওষুধ, কম্পিউটার চিপসহ আরও বেশকিছু আমদানি পণ্যের ওপর আরও শুল্কারোপের আভাস দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপে বিশ্ববাজারে রেকর্ড প্রতি আউন্স প্রায় ৩ হাজার ডলারে পৌঁছেছে স্বর্ণের দাম। অন্যদিকে, মার্কিন ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন শুল্কারোপের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ দায়েরের হুমকি দিয়েছে হংকং। তাদের দাবি, আলাদা কাস্টমস অঞ্চল হিসেবে হংকংকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা বাণিজ্য সংস্থাটির নিয়মের পরিপন্থী।

হংকংয়ের প্রধান সচিব এরিক চ্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হংকংয়ের বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। আমাদের আশা আপাতত শুল্ক আরোপ করবে না তারা। তবে আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করবো। কারণ পুরো ব্যবস্থাটিই অত্যন্ত অযৌক্তিক।’

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও ইস্পাতের উপর ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছিলেন। কয়েকটি দেশকে শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা দিলেও এবার ছাড় দেননি কোনো দেশকে। তার এই পদক্ষেপে বহুমুখী বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে।

এএইচ