গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত দ্বীপ এবং সেমিকন্ডাক্টর পাওয়ার হাউস হিসেবে খ্যাত তাইওয়ানের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এই দ্বীপাঞ্চলটিকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে চীন। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাইপেকে নিজ কব্জায় নিতে মরিয়া বেইজিং।
এর জন্য ২০২৭ সালের মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট তার বাহিনীকে স্বশাসিত দ্বীপটিতে আক্রমণ চালাতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশও দিয়েছেন বলে দাবি করে আসছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যাত্রা শুরু হলো।
যিনি গতবছর অভিযোগ তুলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ১০০ শতাংশই চুরি করে নিয়ে গেছে তাইওয়ান। এছাড়াও মন্তব্য করেন, নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিতের বিনিময়ে তাইওয়ানের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ দেয়া। এমনকি তাইওয়ানকে তার প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে বারবার আহ্বানও জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। যা বর্তমান বরাদ্দের চেয়ে চারগুণ বেশি।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে উদ্বিগ্ন তাইওয়ানবাসী। চীনা আক্রমণ ঠেকাতে ওয়াশিংটনের দেয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি বহাল থাকে কি না তা নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। যদিও ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন আগে বিচ্ছিন্ন দ্বীপটির একটি নৌঘাঁটিতে তাইওয়ান সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতে দু'বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে ওয়াশিংটন। কিন্তু এখনও খোলসা করা হয়নি, চীনকে ঠেকাতে ঠিক কি পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র?
তাইওয়ানের স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমি মনে করি ট্রাম্প একটু বিপজ্জনক। তার চিন্তাভাবনাও ভিন্ন ধাঁচের। তিনি হয়তো রাজনৈতিকভাবে তার সুবিধার কথা ভাবতে গিয়ে বিশ্ব শান্তির জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারবেন না।’
দশকের পর দশক ধরে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব বজায় রেখে আসা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে যখন তাইওয়ানের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তুঙ্গে, তখন আগুনে ঘি ঢালার পরিস্থিতি তৈরি করেছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা।
গত বছর লাই চিং তে প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করলেও তার দল ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি-ডিপিপি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় ঘনীভূত হচ্ছে সংকট। দলটিকে বেকায়দায় ফেলতে মরিয়া তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা মদদ পুষ্ট কুওমিনতাং বা কেএমটি।
বর্তমানে প্রস্তাবিত ৬৫৫ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট থেকে অন্তত সাত শতাংশ কাটছাঁট চাইছে বিরোধী দল কুওমিনতাং ও পিপলস পার্টি। এটি পাস হলে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাইওয়ান বড় হুমকিতে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি সাধারণ কাজ পরিচালনাও দুরূহ হয়ে পড়বে প্রশাসনিক দপ্তরগুলোর।
তাইওয়ানের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ চেন কাই-উ বলেন, 'আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে চাই। তা মার্কিন রাজনৈতিক স্বার্থকে পুঁজি করে হোক বা ভূ-রাজনৈতিক সুবিধার ওপর নির্ভর করে হোক। তবে আমি ভয় পাচ্ছি যে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কোন পথে হাঁটবেন। তাদের এখন বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি স্পষ্ট সিদ্ধান্তের পথে যাওয়া উচিত। যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে আমাদের জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি হতে পারে।'
মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা খাতে তাইপের চেয়ে অনেক এগিয়ে বেইজিং। বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনী ছাড়াও এ খাতে দেশটির তুলনায় প্রায় ১১গুণ বেশি ব্যয় করে চীন।