উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী রোধে নেয়া প্রথম পদক্ষেপ সফল দাবি ট্রাম্পের

মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ আটকাতে নেয়া প্রথম পদক্ষেপ সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট বলছেন, অভিবাসীদের ঢল সামলাতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করলেও, ইউএস-মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধের বিষয়ে তারা আগ্রহী নন। বুধবারের ফোনালাপের পর দুই রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিক্রিয়া দুরকম হওয়ায়, ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

ক্ষমতা নেয়ার প্রথম দিনই মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি কিংবা এক ফোনেই অভিবাসী সংকট সমাধান- নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার ফুলঝুরিতে সয়লাব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। যদিও মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউমের বক্তব্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে যে দাবি করছেন তার সঙ্গতি মিলছে না।

যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকান পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে, ওয়াশিংটনের পণ্যের ওপরেও পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে ক্লদিয়া শেনবাউমের এই ঘোষণা, কিংবা ইউএস মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধের প্রস্তাবে সম্মত না হওয়া- এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কীভাবে সফলতার প্রথম ধাপ তা পরিষ্কার নয়। যদিও, খবরের হেডলাইন হতে বিগত শাসনামলেও এমন অনেক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প- এমন ব্যাখ্যাও হাজির করছে কোনো কোনো মার্কিন গণমাধ্যম।

কানাডিয়ান- মেক্সিকান পণ্য ছাড়াও চীনা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা পুনর্বিবেচনা করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ম্যাসাচুসেটসে থাংক্স গিভিং ডে এর একটি আয়োজনে অংশ নিয়ে বাইডেন বলনে, মিত্র রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দুবার চিন্তা করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমি আশা করি তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন। সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও তাই করা উচিত। আপনারা আমাকে আগেও বলতে শুনেছেন আমেরিকার ভৌগোলিক অবস্থান একটু আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রের চারপাশে প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও দুই দেশ: মেক্সিকো ও কানাডা। এই দুই দেশের সাথে সম্পর্কের অবনতির সিদ্ধান্ত খুব বাজে পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকো ও কানাডা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ বৈদেশিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ মেক্সিকোর আর প্রায় ১৪ শতাংশ কানাডার। ফলে, শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

একজন মেক্সিকান নাগরিক বলেন, ‘সীমান্ত বন্ধের গুঞ্জন নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে না আসতে পারলে বিপদে পড়বো।’

ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা নিয়েও থেমে নেই গুঞ্জন। নতুন মন্ত্রিসভার লোকবল নিয়োগের সময় বর্ণ-জাতি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। বর্ণ বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে ১৮ শতাংশ সচিব নিয়োগ বা মন্ত্রিসভার ৩৬ শতাংশ পদে নারীদের মনোনয়ন দেয়া দেশের প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিফলন নয় বলে দাবি করছেন ইনক্লুসিভ আমেরিকার কর্মকর্তারা।

এদিকে, ট্রাম্প 'টু পয়েন্ট ও' প্রশাসনের মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রাণনাশ ও বোমা হামলার হুমকির মধ্যেই খোদ নয়া প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বলেন, ট্রাম্প অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতা। দুইবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের হত্যা চেষ্টা হতে পারে এমন আশঙ্কা জানান পুতিন।

মাদক চোরাচালান বন্ধ ও অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অবস্থানের জন্য ট্রাম্পের ওপর মার্কিনরা যে আস্থা দেখাচ্ছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে সেই আস্থা অটুক থাকবে কী না এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি আছে। বিশেষ করে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্টদের ওপর এই সিদ্ধান্ত কী ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে- সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এএম