শুক্রবার ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তগামী একটি কার্গো ট্রেনে অভিবাসীরা যেভাবে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, তা দেখে মনে হচ্ছে এই ট্রেন মিস করলে হয়ত তাদের জীবন থেকেই হারিয়ে যাবে সুবর্ণ কোনো সুযোগ।
উন্নত জীবন আর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার আশায় কয়েক মাইল পথে পাড়ি দিয়ে শুক্রবার মেক্সিকোর বন্দরনগরী কোয়াটজাকোয়ালকোসে জড়ো হয়েছেন হাজারো শরণার্থী। ভেরাক্রুস রাজ্যের এই স্টেশনে বাবা মায়ের হাত ধরে এসেছে ছোট্ট শিশু। বিপদের তোয়াক্কা না করে অবলীলায় এই শিশুদের ট্রেনে ছাদে উঠিয়ে দিচ্ছেন তারা।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা এই মালবাহী ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছেন তাদের কাছে দুর্ঘটনার চেয়ে বড় ভাবনার বিষয় অর্থনৈতিক মুক্তি। কারণ এর আগে এভাবে ট্রেনে চড়তে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বা পঙ্গু হয়েছেন- এমন অভিবাসীর সংখ্যা কম নয়। তবুও উন্নত দেশে বসবাসের স্বপ্নে বিভোর এই অভিবাসীরা মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে পাড়ি জমানোর আশা করছেন।
অভিবাসীদের একজন বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষায় যারা কাজ করছেন তাদের সবচেয়ে ভয় পাই। কারণ আপনি যাত্রা শুরুর পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন জায়গায় প্রবেশ করছেন যেখানে আপনার যাওয়ার অনুমতি নেই। কাস্টমস কর্মকর্তাদের দেখলে ভয়ে পালাচ্ছেন। তারা বলছেন, শরণার্থীদের নিরাপত্তা দেয়াই ওনাদের প্রধান কাজ। কিন্তু তারা আপনাকে যেখান নিয়ে যাবে তা ভীষণ বিপজ্জনক। অপহরণসহ নানা ধরনের সমস্যার পড়তে পারেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর পাড়ি জমানো অভিবাসীদের মধ্যে মেক্সিকো সীমান্তে দিয়ে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইউএস মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন নীতি কিংবা সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো- এমন নানা ঘোষণা দিয়ে নিজের অভিবাসী বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অর্থাৎ ২০ জানুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করার বেআইনি পদ্ধতিটি আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি কঠিন হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করেই সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন অনেক অভিবাসী। আর, ট্রাম্পের অভিবাসননীতি জেনেও ভেনেজুয়েলা থেকে মেক্সিকোতে আসা অভিবাসীরা এখনও আস্থা রাখছেন ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেক্টের ওপর।
অভিবাসীদের আরেকজন বলেন, ‘আশা করি, তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ভেনিজুয়েলানদের আলাদা করে সুযোগ দেবেন। তিনি আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতিও দেবেন। ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে- এটাও আশা করছি।’
গেল সপ্তাহে ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টের মাধ্যমে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, সীমান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি জারি করা হবে। নামানো হবে সেনাবাহিনী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে পাড়ি জমানোর পথ থেকে সরে আসতে হবে অভিবাসন প্রত্যাশীদের।