বিগত মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নির্বাহী আদেশ জারি করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন কয়েকটি দেশের নাগরিকদের, যা মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে পরিচিত। বছর না পেরোতেই ডিসেম্বরে পূর্ব জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেন ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে। একদিকে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে ছিলেন কামালা হ্যারিস। যিনি গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞে সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চার বছর ধরে। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে কাউকেই বন্ধু ভাবতে না পেরে এবারের নির্বাচনে একরকম উভয় সংকটেই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আরব আমেরিকান, তথা মুসলিম ভোটাররা।
ট্রাম্পের তুলনায় ভালো বিকল্প হিসেবে কামালাকে ভোট দেয়ার পক্ষে প্রচার চালানো বিভিন্ন মুসলিম পরামর্শক সংস্থা বলছে, এবারের নির্বাচনে অনেক আরব আমেরিকানই ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পকে। গাজায় সংকটের পাশাপাশি ট্রাম্পের সমাজকল্যাণ নীতিও তাদের সমর্থনের অন্যতম কারণ। সংখ্যায় কম হলেও মিশিগানসহ নির্বাচনে সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটের সমীকরণ পাল্টে বড় ভূমিকা রেখেছেন এই মার্কিন মুসলিমরা।
একজন মার্কিন মুসলমান বলেন, 'মুসলিমদের জন্য তিনি তেমন কিছু করেননি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি যে মুসলিমদের তিনি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে তিনি যুদ্ধেরও বিরুদ্ধে। তাই আমরা আশা করছি যে হয়তো এবার তিনি সব মুসলিম দেশে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তাহলে মানবতা রক্ষা পেতো।'
আশার বিপরীতে ভয়ের ছায়াও ঘিরে রেখেছে অনেক আরব আমেরিকানকে। গাজা, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু কিংবা ভিনদেশি মুসলিমদের প্রবেশাধিকারের মতো ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু মুসলিম হিসেবে নিজেদের অধিকার, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বেশি ভাবাচ্ছে তাদের। খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী মুসলিমদের। প্রায় ৪৫ লাখ মুসলিমের বাস দেশটিতে যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র এক শতাংশ। এ অবস্থায় ট্রাম্পের শাসনামলে ধর্মীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি নারী অধিকার নিয়েও শঙ্কিত অনেক মার্কিন মুসলিম।
একজন মার্কিন মুসলমান বলেন, 'সংখ্যালঘু হিসেবে আমাদের কথা কখনোই কেউ শোনেনি বলে মনে করি আমি। আমাদের বলার এবং আমাদের কথা শোনার ব্যবস্থা করবেন, এমন কাউকে ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল। এখন যেহেতু ক্ষমতায় ফিরছেন ট্রাম্প, সংখ্যালঘুরা ১০ পা পিছিয়ে যাবে এবং আজ পর্যন্ত আমরা, আমাদের পূর্বসূরিরা যতো লড়াই লড়েছেন, সব ব্যর্থ হয়ে যাবে।'
অন্য একজন মার্কিন মুসলমান বলেন, 'আমার মনে হচ্ছে যে নারী হিসেবে নিজের অধিকারও হারাতে যাচ্ছি আমি। তিনি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন খ্রিস্টানদের। তাই ধর্ম পালনের অধিকারও হয়তো আমার থাকবে না।'
কথিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবেন বলে নির্বাচনের আগেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এটি কার্যকরে মুসলিম অধ্যুষিত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে। প্রথম মেয়াদে এ নিষেধাজ্ঞার জেরে বেশ কিছু আইনি লড়াইয়েও জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প।