যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর মার্কিনিদের কাছে ভুতুড়ে বার্তা আসতে শুরু করেছে। কৃষ্ণাঙ্গদের উদ্দেশ্যে দাসত্বের খাতায় নাম লেখানোর আহ্বান জানিয়ে পাঠানো বার্তায় শঙ্কা ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। প্রতিটি বার্তাই পাঠানো হয়েছে প্রাপকের নাম উল্লেখ করে।
চিনি আর তামাকের পরই বিশ্বের প্রথম দিককার বিলাসবহুল পণ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল তুলা। দাসপ্রথার সময় ১৮ শতকে দীর্ঘ ছয় দশক তুলা চাষ হতো আফ্রিকান বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর হাতে, যাদের পরিচয় ছিল দাস। এমনকি আইন করে দাসপ্রথা বাতিলের প্রায় একশ বছর পরও তুলাশ্রমিক হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন কৃষ্ণাঙ্গরা। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিশ্চিতের পর থেকেই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের কাছে পৌঁছানো বার্তায় মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে ভয়াবহ বেদনার দাসপ্রথার সে অতীত। ভুয়া নম্বর থেকে পাঠানো বার্তায় তুলা চাষে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গদের।
আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা বলছেন, ‘যারা নোংরামি, নিষ্ঠুরতায় শুরু থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এসব বার্তা তাদের সূচনা মাত্র। কতটা নোংরা, তার চেয়েও বেশি কত অশুভ তারা হতে পারে, একটি গোষ্ঠীর প্রতি কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, সেটাই তারা দেখাতে শুরু করেছে। যে রাতে নির্বাচনের ফল দেখলাম, পরদিন ঘুম থেকে জেগেও দেখলাম, তখন থেকেই এসব শুরু হয়েছে। আমরা ঘৃণা ছড়াতে এখানে আসিনি। বিদ্বেষ, ক্ষোভ বা এমন কিছুর জন্যই আমরা প্রস্তুত নই। যে জিতেছে, জিতেছে। তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু হাঁটতে চাই শান্তির পথে।’
অ্যালাবামা, ওহাইও, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, নিউ জার্সি, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়াসহ মোট ২১টি অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা পেয়েছেন বর্ণবাদী ও জাতিবিদ্বেষী এসব বার্তা। প্রাপকদের মধ্যে আছে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। কত মানুষকে উদ্দেশ্য করে বার্তা পাঠানো হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারা পাঠিয়েছে জানা না গেলেও কিছু বার্তায় নিজেকে ট্রাম্প সমর্থক দাবি করেছেন প্রেরক। যদিও এসব বার্তার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।
এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন। সমন্বিতভাবে কাজ করছে বিচার বিভাগ ও গোয়েন্দা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। যে ভাষায় বার্তা লেখা হয়েছে, তা হেইট ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সর্ববৃহৎ সংগঠন। পরিস্থিতির জন্য নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগী এবং অধিকারকর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এন.এ.এ.সি.পি প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড গ্রিগস বলেন, ‘আমার মনে হয় যে এর লক্ষ্য হলো একদল মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করা। তরুণ যারা কখনো এ ধরনের প্রত্যক্ষ ঘৃণা বা বিদ্বেষ দেখেনি, তাদের মধ্যে ভয় ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ দেশের পরিবেশ কেমন ছিল, তা মনে আছে আমাদের। মনে হচ্ছে যে ওই পরিবেশই আবার ফিরে আসছে।’
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরগুলোকে যত হেইট ক্রাইমের খবর পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোর পাঁচ ভাগের একভাগের শিকার ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গরা। গেল সপ্তাহের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার সবচেয়ে বড় প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা বাড়ছে, যা অন্তত ১৯৭০ এর দশক থেকে গত ৫০ বছরে দেখা যায়নি।