উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

যে সাত অঙ্গরাজ্যের হাতে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের চাবি

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন ৫১ অঙ্গরাজ্যের প্রায় ২৪ কোটি নিবন্ধিত ভোটার। কিন্তু হোয়াইট হাউসে প্রবেশের চাবি মূলত সাতটি অঙ্গরাজ্যের হাতে। ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান পার্টির দুর্গ হিসেবে বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্য নির্ধারিত থাকলেও সুইং স্টেটস হিসেবে পরিচিত সাত অঙ্গরাজ্য কোনদিকে ঝুঁকবে তার ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন সে সিদ্ধান্ত।

জুলাই মাসেও যে ভোটাররা বুঝতে পারছিলেন না কাকে ভোট দেবেন, দুই মাসের মাথায় প্রধান দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রথম ও একমাত্র বিতর্ক শেষ হতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তাদের অনেকে।

জাতীয় পর্যায়ের হিসাব কামালার মোটামুটি অনুকূলে এবং দুই নেতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস জারি থাকলেও সুইং স্টেটস হিসেবে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে জরিপের ফল ট্রাম্পের জন্য নিচ্ছে ইতিবাচক মোড়।

ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান,কোনো দলের প্রতিই সমর্থন সুনির্দিষ্ট নয় কিংবা উভয় পক্ষেই সমর্থন প্রায় সমান, যুক্তরাষ্ট্রে এমন অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় সুইং স্টেটস। এবার যেখানে পাল্লা খানিকটা ভারি ট্রাম্পের। ব্যাটলগ্রাউন্ড, অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল যুদ্ধক্ষেত্র এসব অঙ্গরাজ্যই আখেরে নির্ধারণ করবে কে হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান। সে হিসেবে চলতি বছর অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া আর উইসকনসিনে আছে হোয়াইট হাউজে প্রবেশের চাবি।

কিন্তু সারা দেশের অর্ধশত অঙ্গরাজ্যের ২৪ কোটি ভোটারের বিপরীতে মাত্র সাত অঙ্গরাজ্যের ভোট কেন গুরুত্বপূর্ণ? মার্কিন সংবিধান অনুসারে, সাধারণ ভোটারদের ইচ্ছে তথা পপুলার ভোট এবং কংগ্রেসের নীতিনির্ধারকদের রায়, তথা ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে সমঝোতা বা ভারসাম্য বজায় রেখে নির্বাচিত হবেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট হতে হলে ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ নির্বাচকের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে, কমপক্ষে ২৭০ ভোট নিশ্চিত করতে হবে প্রার্থীকে। আর নির্বাচনী ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের বড় একটি অংশ, চলতি বছর যা ৯০টির বেশি, আসবে সুইং স্টেটস থেকে, সমসাময়িক ইস্যুভেদে যে সংখ্যা প্রতি নির্বাচনে পরিবর্তনশীল। সরাসরি জনতার রায়, অর্থাৎ পপুলার ভোটে জিতলে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটেও জিতবেন প্রার্থী, এমনটা জরুরি নয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনেই ট্রাম্পের চেয়ে দুই লাখের বেশি পপুলার ভোট নিশ্চিত করলেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন তৎকালীন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে সাত সুইং স্টেটসের মধ্যে প্রথমেই আসে অ্যারিজোনার নাম। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল এই অঙ্গরাজ্যটি। মেক্সিকোর সঙ্গে প্রায় দুই হাজার মাইল সীমান্ত বলে অভিবাসী সংকট ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সব নির্বাচনেই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে অ্যারিজোনা।

বিগত নির্বাচনে তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতায় টেকাতে আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর জয় ঠেকাতে যেভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন জর্জিয়ার রিপাবলিকান কর্মকর্তারা, তাতে চার বছর পরের নির্বাচনেও প্রাসঙ্গিক এই অঙ্গরাজ্যটি। জর্জিয়ার মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এবং সারা দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অন্যতম বড় অংশ; যারা ট্রাম্পের বিপরীতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন দিয়েই ভোটের গতি পাল্টে দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

বিগত দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর পেছনে বড় অবদান গ্রেট লেকস অঞ্চলের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের। ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনকে সমর্থন দিলেও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রেসিডেন্টের সমর্থনে বর্তমান সরকারের প্রতি দেশজুড়ে ক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছে মিশিগান। যুক্তরাষ্ট্রে আরব বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের সবচেয়ে বড় অংশের বাস মিশিগানে।

বিগত কয়েকটি নির্বাচনেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর দিকে ঝুঁকেছিল রূপালী রাজ্য খ্যাত নেভাডা। তবে এবার ভোটের ফল উল্টে এ অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান শাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে নেভাডায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি ছিল সবচেয়ে কম। বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ নেভাডায়, পাঁচ শতাংশের বেশি। নির্বাচনে জিততে কর কমানোসহ অর্থনীতি জোরদারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে পেছনে ফেলেছেন ট্রাম্প।

বিগত কয়েক দশক ধরে রিপাবলিকান পার্টির দুর্গ নর্থ ক্যারোলাইনা। কিন্তু বিগত নির্বাচনে এ অঙ্গরাজ্যে দলটির প্রতি জনসমর্থন তলানিতে পৌঁছায়। ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতলেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর চেয়ে মাত্র ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। এবারও সে ধারা বজায় রেখে রিপাবলিকান দুর্গে ফাটল ধরানোর আশা ডেমোক্র্যাটদের।

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রথম হত্যাচেষ্টা থেকে ট্রাম্প বেঁচেছেন পেনসিলভেনিয়ায়। অঙ্গরাজ্যটিতে জোরদার গতিতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দু'পক্ষই। ২০২০ সালে বাইডেনকে সমর্থন দেয়া এ অঙ্গরাজ্যেও নির্বাচনের প্রধান ইস্যু অর্থনীতি। জীবনযাত্রার ব্যয়, বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে পেনসিলভেনিয়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর পাল্লা ভারি ছিল উইসকনসিনে। অর্থাৎ রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি যথাক্রমে সমর্থন বেশি পেয়েছে বিগত দুই নির্বাচনে। কিন্তু দু'বারই ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ২০ হাজার। জনমত জরিপ বলছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে চেয়েছিলেন রিপাবলিকান সমর্থকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষ্যাপাটে হিসেবে পরিচিত, বিতর্কিত ট্রাম্প মনোনয়ন পাওয়ায় ডেমোক্র্যাটদের ঝুলিতে চলে যেতে পারে কেনেডি সমর্থকদের ভোট।

৫ নভেম্বর ভোটগ্রহণ শেষ হলেও সাত সুইং স্টেটসসহ সারা দেশের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট গণনা হবে তারও এক মাস পর, নতুন বছরের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে। এরপর ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর