উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

বেফাঁস মন্তব্যে কি তীরে এসে তরী ডুববে ট্রাম্পের?

একটি বেফাঁস মন্তব্যে কি তীরে এসে তরী ডুববে ট্রাম্পের? প্রতিযোগিতাপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ পুয়ের্তো রিকান মার্কিন ভোটাররা; তাদেরই 'ভাসমান বর্জ্য' আখ্যা দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। তাতেও অবশ্য নির্লিপ্ত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌প্রার্থী। ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান উপেক্ষা করে উল্টো ধর্মকে আলোচনার কেন্দ্রে এনে ছড়িয়েছেন নতুন বিতর্ক।

ট্রাম্পের হয়ে প্রচারে নামা অতিথি অভিবাসীদের নিয়ে এমন মন্তব্য নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে এভাবে চেপে বসবে, তা হয়ত কল্পনাতেও ছিল না রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের। মন্তব্যকারীর সঙ্গে নেতার দৃষ্টিভঙ্গির সম্পর্ক নেই বলে তৎক্ষণাৎ ট্রাম্প শিবির বিবৃতি দিলেও ততক্ষণে পুয়ের্তো রিকো থেকে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা থেকে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগে যে লোক এখানে ছিল, সে আমাদের নিয়ে এভাবে ভাবে, এটা লজ্জাজনক। তার গল্ফ কোর্স ছিল এখানে, হোটেল ছিল কিছু। সব হারিয়ে এখন সে আমাদের অসম্মান করে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ, আমরা মার্কিন নাগরিক।’

সাড়ে চার কোটি, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ অভিবাসীর দেশে তাদেরই বিরুদ্ধে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য রয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের। কিন্তু ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোর ৩২ লাখ মানুষকে 'ভাসমান বর্জ্য' আখ্যা দেয়া, তাও ৩১ লাখ অভিবাসীর শহর নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে, মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘ভুলভাবে, ভুল সময়ে, ভুল স্থানে কথাটি সে বলেছে। পুয়ের্তো রিকোর মানুষে ভরা নিউইয়র্ক এটা।’

আরেকজন বলেন, ‘যেকথা শুনেছি, তাতে সত্যিই দুঃখ পেয়েছি। অসম্মানিত বোধ করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোটের সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়াসহ প্রতিযোগিতাপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বংশ বা জন্মসূত্রে পুয়ের্তো রিকান মার্কিন নাগরিকদের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবির থেকেই লাতিন ভোট টানতে চালানো হচ্ছে জোর প্রচারণা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিপাবলিকানদের লাতিন ভোট বাড়লেও ঐতিহাসিকভাবে এখনও ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝোঁক লাতিন জনগোষ্ঠীর।

ভোটারদের একজন বলেন, ‘অবশ্যই ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেবো। কারণ পুয়ের্তো রিকানদের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান পার্টি নিজেদের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের অপমান করে। আমরা জন্ম থেকে মার্কিন নাগরিক। অনেক হয়েছে, আর সহ্য করবো না।’

এমন পরিস্থিতিতে, একদিকে তীরে এসে তরী ডোবার শঙ্কায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ট্রাম্প শিবির; অন্যদিকে বিরোধীরা ট্রাম্পকে কোণঠাসা করতে লুফে নিয়েছে এ সুযোগ।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম ওয়ালজ বলেন, ‘পুয়ের্তো রিকোর মানুষ এদেশের নাগরিক। তারা কর দেন এবং আমাদের সেনাবাহিনীতে এখানকার মানুষের অবদান অন্য যে কোনো অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি।’

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে ডি ভ্যান্স বলেন, ‘যেমন বলা হচ্ছে যে এটা বিরক্তিকর জাতিবিদ্বেষী কৌতুক, হয়ত কিংবা হয়ত না। নিজে শুনিনি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করবো না। কিন্তু আমার মনে হয় যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে এতো মনক্ষুণ্ন হওয়া আমাদের বন্ধ করা উচিত।’

পুয়ের্তো রিকোর ধর্মযাজক ট্রাম্পকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানালেও তা আমলে নেননি ট্রাম্প। উল্টো সোমবার জর্জিয়ার জনসমাবেশে ৭৮ বছর বয়সী এ নেতা এবার আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এলেন ধর্মকে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস।

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এদেশে অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসীরা থাকলেও মানুষ আমাদের চিনতো খ্রিষ্টান এবং সত্যিকারের ধার্মিক হিসেবে। ইদানীং মনে হচ্ছে যে এদিক থেকে উল্টো পথে যাচ্ছি আমরা। এতে পতন ঘটলে আমাদের দেশেরও পতন ঘটবে বলে মনে করি আমি। এটা এমন এক দেশ যেখানে ধর্ম প্রয়োজন, যা সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে রাখে, যা আমাদের নেই। এদেশে ধর্ম হুমকির মুখে আছে এবং সেটি গুরুতর হুমকি।’

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কী, এসব অবশ্য তিনি নতুন ঘটাচ্ছেন না। গত রাতে যা তিনি ঘটিয়েছেন, তা কোনো আবিষ্কার নয়। তিনি একই আছেন। তিনি কী, সেটাই আরও স্পষ্ট করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প সারাক্ষণ চেষ্টা করেন যেন মার্কিনিরা একে অন্যের দিকে আঙুল তুলে রাখে। তিনি ঘৃণা আর বিভক্তি উসকে দিচ্ছেন।’

পুয়ের্তো রিকো নিয়ে রিপাবলিকান প্রচারে জাতিবিদ্বেষী কৌতুকের নিন্দা জানিয়েছেন অনেক মার্কিন তারকা। ২০১৭ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপটিতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মারিয়ার আঘাতে প্রাণ যায় তিন হাজারের বেশি মানুষের। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে সফরে গিয়ে ত্রাণকেন্দ্রে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে অপেক্ষমাণ জনতার ভিড়ে টিস্যু পেপার ছুঁড়ে মেরেছিলেন।

ইএ