উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

কানাডার সঙ্গে মোদি সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান

ভারত-কানাডা চলমান কূটনৈতিক টানাপড়েনে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মোদি সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। এতে বহির্বিশ্বে ভারতের মর্যাদাহানি হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়। এদিকে কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন ভারতের সাধারণ বাসিন্দারাও। অন্যদিকে কানাডায় হত্যা-সহিংসতা ও অপরাধমূলক কাজে ভারতের অপরাধী চক্র লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছে কানাডিয়ান পুলিশ।

খালিস্তানপন্থী নেতা হারদিপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের জেরে কানাডার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বছরখানেক ধরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক দেশ আরেক দেশকে দোষারোপ করে আসছে। খালিস্তানপন্থি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ট্রুডো সরকারকে বারবার বলেও কানাডার মন গলাতে পারেনি ভারত। উল্টো ভারতকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ট্রুডো।

সম্প্রতি কানাডিয়ান পুলিশ বিভাগ জানায়, ভারতের কুখ্যাত অপরাধী চক্র লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যরা কানাডায় সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক কাজ করছে। তাদের সঙ্গে ভারতীয় এজেন্ট ও কূটনীতিকরা জড়িত।

রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সহকারী কমিশনার ব্রিগেতে গভিন বলেন, 'কানাডায় সংগঠিত অপরাধমূলক কাজের তদন্ত করে আমরা দেখেছি এসব সহিংসতায় অপরাধী চক্র বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত আছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দাদের টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। তাদের ব্যবহার করে কানাডায় অপরাধমূলক কাজ সংগঠিত করছে ভারতের এজেন্টরা। এসব কাজের সঙ্গে ভারত সরকার জড়িত।'

এদিকে কানাডার নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শিখ নেতা জাগমিত সিং ভারতীয় কূটনীতিক ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী আরএসএস দলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। জগমিত সিং স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তানের কট্টর সমর্থক। নিজ্জর হত্যাকাণ্ডকে উপেক্ষা করা ভারতের কোনো সুযোগ নেই বলে জানান এই শিখ নেতা।

কানাডার নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জাগমিত সিং বলেন, 'কানাডিয়ান পুলিশ যে তথ্য দিয়েছে সেগুলো সত্যিই উদ্বেগজনক। কানাডিয়ানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটাতে ভারত সরকার বিশেষ করে মোদি সরকার কানাডায় অপরাধীদের জড়িত করছে। কানাডাকে সুরক্ষিত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে নিউ ডেমোক্র্যাটিক দল। কানাডায় শান্তি ফেরাতে চরমপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী আরএসএস ও ভারতীয় কূটনীতিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।'

এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দুই দেশ ছয় জন করে মোট ১২ জন কূটনীতিককে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার করে। গেল দুই দিনে যা ঘটেছে তাতে খুব শিগগিরই ভারত ও কানাডার সম্পর্ক জোড়া লাগবে না তা বেশ স্পষ্ট। এবার কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সমাধানের উপায় খোঁজার আহ্বান জানান কংগ্রেস নেতারা।

বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির নেতা রাশিদ আলভি বলেন, 'ভারত সরকারের প্রমাণসহ কানাডার সঙ্গে এই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। কারণ এ ঘটনা শুধু কানাডার সঙ্গেই না, পুরো বিশ্বেই ভারতের মর্যাদা হানি হচ্ছে। এটি আগে কখনও ঘটেনি। বিজেপি সরকার আসার পরই এমন কাণ্ড ঘটছে। তাই বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।'

তবে কানাডার সঙ্গে ফের সুসম্পর্ক গড়া সম্ভব বলে মনে করে পাঞ্জাববাসী। সংকট সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর জোর দেয়ার আহ্বান তাদের।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমার আশা ভারত ও কানাডার মধ্যে বিরোধ খুব দ্রুতই মিটে যাবে। ভবিষ্যতে কানাডায় যাওয়ার পরিকল্পনা করলে সমস্যায় পড়তে চাই না। এটি রাজনৈতিক ইস্যু। তবে রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য একটি ক্ষতি। বিশেষ করে যারা কানাডায় পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। পড়াশোনার জন্য কানাডায় যাওয়া এবং সেখানে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করা এখন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

ভারত সরকার বলছে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতের বিরোধিতা করে আসছেন। যা তার রাজনৈতিক এজেন্ডা। কানাডায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে ট্রুডো সরকার।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর