গাজার শাসকদল হামাস আর লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ, ইরান সমর্থিত দু'টি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে ইসরাইল। কাজেও ঘটছে এই লক্ষ্যের প্রতিফলন। লেবাননের মাটিতে সাম্প্রতিক গুপ্ত হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন হিজবুল্লাহ'র শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা। সবশেষ হিজবুল্লাহর তিন দশকের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর তার উত্তরসূরী হাশেম সাফিউদ্দিনকেও হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল।
দীর্ঘকাল আত্মগোপনে থাকা হিজবুল্লাহর হাই-প্রোফাইল নেতাদের একজন একজন করে খুঁজে বের করে হত্যা করছে ইসরাইল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক অভিযানে এটাই প্রমাণিত যে হিজবুল্লাহ'র পরতে পরতে ঘটেছে ইসরাইলি গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ।
যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, 'হয় এসব হত্যাকাণ্ড পরিচালনায় সরাসরি সাহায্য পাচ্ছে ইসরাইল। না হয় ডিজিটালি, ইলেক্ট্রনিক্যালি এবং সম্ভবত মানবসম্পদসহ নানা দিক থেকে হিজবুল্লাহর ভেতরে ইসরাইলি অনুপ্রবেশ ঘটেছে।'
নব্বইয়ের দশকের শুরুতেও হিজবুল্লাহর তৎকালীন প্রধান আব্বাস আল-মুসাবিকে হত্যার মাধ্যমে গোষ্ঠীটির মূলে আঘাত করেছিল ইসরাইল। মুসাবির নাম অনেকে ভুলে গেলেও তিন দশকের বেশি সময়ে হিজবুল্লাহ দিনে দিনে হয়েছে আরও সংগঠিত, বাড়িয়েছে শক্তি। এবারও সংকট কাটিয়ে উঠবে গোষ্ঠীটি- এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
লেবাননের লেভান্ত ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদের বলেন, 'নাসরাল্লাহর যে অবস্থান, যে ক্যারিশমা, তিনি এমন একজন নেতা যার যোগ্য উত্তরসূরী মেলা ভার, তাই তার শূন্যস্থান স্বল্পমেয়াদে নিঃসন্দেহে অনেক বড় আঘাত। কিন্তু এ আঘাত দীর্ঘমেয়াদে হিজবুল্লাহকে বদলাতে পারবে না। কারণ দিনশেষে হিজবুল্লাহ একটি চেতনার নাম। ঠিক যেমন হামাস। এই চেতনাকে বাতিল বা নির্মূল সম্ভব না।
মারওয়ান বিশারা বলেন, 'একের পর এক নেতাকে হত্যার মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে, যেভাবে গোষ্ঠীটিকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে- তা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু এটি লাখ লাখ যোদ্ধার অনেক বড় সংগঠন। এটি এমন একটি সংগঠন যা এক ব্যক্তিনির্ভর নয়।'
শুধু নেতৃত্বেই নয়, সামরিক শক্তিতেও হিজবুল্লাহকে দুর্বল করতে অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে সমানে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। কিন্তু এর মধ্যেও ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট হামলার পাশাপাশি লেবানন সীমান্তে ঢুকে পড়া ইসরাইলি সেনাদের পিছু হঠতে বাধ্য করছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা।