মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসমাইল হানিয়ার হামাস প্রধান হওয়ার গল্প

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া, পুরো নাম ইসমাইল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া। হামাসের মধ্যে সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন তিনি। হামাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে গাজায় জিম্মি ও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মিশরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সাথে মূল আলোচক ছিলেন ইসমাইল হানিয়া।

ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হয়। আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করা ইসমাইল হানিয়া শিক্ষাজীবন থেকেই হামাসের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৩ সালে ছাত্র থাকাকালীন হামাসের অগ্রদূত ইসলামিক ছাত্র ব্লকে যোগদান করেন।

১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে হামাসের উত্থানের সময় ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন তিনি।

১৯৮৭ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠীটিতে যোগ দেন তিনি। যখন ফিলিস্তিনে প্রথম ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইন্তিফাদা শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসরাইল। তিন বছর বাদে ১৯৯২ সালে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আরও কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে হানিয়াকে ইসরাইল ও লেবানন সীমান্তের শূন্যরেখায় ছেড়ে দেয়া হয়। একবছর নির্বাসনে থাকার পর গাজায় ফিরেন তিনি।

এরপর ১৯৯৭ সালে দায়িত্ব পান হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে। এতে যেমন তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায় তেমনি দায়িত্বও বাড়ে দ্বিগুণ।

হামাসে ইসমাইল হানিয়ার প্রভাব আরও পোক্ত হয় ২০০৪ সালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন নিহত হলে। গাজা উপত্যকায় শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন ইসমাইল হানিয়া।

ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে ইসমাইল হানিয়ার সরাসরি উত্থান ঘটে ২০০৬ সালে। মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন বিভক্ত ফাতাহ দলের বিপরীতে নির্বাচনে জয় পায় তার দল আর এ জয়ের পর তিনি ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন।

কিন্তু ২০১৭ সালেই যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা দেয়। ইসমাইল হানিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমাও দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

২০১৬ সাল থেকে কাতার আর তুর্কিয়েতে থাকছেন তিনি। সম্প্রতি ইসমাইল হানিয়া ইরানের রাজধানী তেহরানে গিয়েছিলেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। সেখানেই হত্যার শিকার হন তিনি।

সৌদি আরব বলছে, ইরানের রাজধানী তেহরানে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ভবনে অবস্থান করছিলেন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। সেখানেই নিজের দেহরক্ষীর সঙ্গেই টার্গেট করে গাইডেড মিসাইল ছুঁড়ে তাকে হত্যা করা হয়। হামাস বলছে, ইসরাইল এ হামলা চালিয়েছে। বদলা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সশস্ত্র সংগঠনটি। তবে এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব ইসরাইল।

তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনায় ইসরাইল দায় স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যে বেড়ে গেল যুদ্ধের আশঙ্কা। এখন ত্রিমুখী যুদ্ধ লাগতে পারে লেবানন, ইরান আর ইসরাইলের মধ্যে।