যুদ্ধ , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

গাজার ধ্বংসস্তূপ অপসারণে প্রয়োজন ১৪ বছর

প্রায় ৭ মাসব্যাপী যুদ্ধে গাজায় ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টন। যা অপসারণে লাগবে ১৪ বছর। যুদ্ধের ২০৪ দিন পেরিয়ে গেলেও গাজায় থামছে না ইসরাইলি আগ্রাসন।

শুক্রবার দিনভর হামলায় উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ জন। ইসরাইলি হামলায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া জীবিত শিশুটিও মারা গেছে ৪ দিনের মধ্যেই। এমনকি তীব্র তাপপ্রবাহে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

অসম এই যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ধ্বংসস্তূপ অপসারণে প্রয়োজন ১৪ বছর। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের কর্মকর্তা জানান, ধ্বংসস্তূপ অপসারণের সময় বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে আছে ইসরাইলের ১০ শতাংশ গোলা।

জাতিসংঘ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফের লোধামার বলেন, 'ধারণা করছি গাজায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টন ধ্বংসস্তূপ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ধ্বংসস্তূপ প্রায় ৩০০ কেজি। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার ৬৫ শতাংশই আবাসিক ভবন।'

নতুন করে হামাসের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসরাইল। মিশরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ নিয়ে যেকোন সময় আলোচনা হতে পারে হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিদের। যদিও হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।

গাজায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখাদেখি ফ্রি প্যালেস্টাইন স্লোগানে উত্তাল বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বেশি কয়েকটি স্থানে। আটক করা হয়েছে শত শত শিক্ষার্থীকে।

শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন ৩০০ শিক্ষক। অন্যদিকে টেক্সাস বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের আটক অন্যায়। ইসরাইলকে অস্ত্র সুবিধা দেয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও অংশীদারিত্ব সম্পর্ক ছিন্নের দাবি শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সম্পদ প্রকাশ করে গাজার ইস্যুতে নীরবতা ভাঙ্গতে হবে। আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের কারণ একটাই, আমরা চাই না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যার অর্থায়ন করুক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন ইহুদিরাও। ধর্মের নামে গাজায় আগ্রাসন বন্ধের দাবি ইহুদি ধর্মগুরুদের।

এক ইহুদি ধর্মগুরু বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে গাজায় আগ্রাসন চালানোর প্রক্রিয়া অযৌক্তিক। একজন ধার্মিক ইহুদি হিসেবে বলছি, ইসরাইল অনেক বড় ভুল করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ায় মতপ্রকাশ করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো নাগরিকরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। আমি মনে করি এটি আমাদের দেশের ঐক্য ও গণতন্ত্রের শক্তি প্রদর্শন করে।'

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও। ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী সাইন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছেন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। এমনকি গাজা সীমান্ত দিয়ে কয়েকজন ইহুদি ফিলিস্তিনিদের জন্য খাবার নিয়ে যাবার সময় তাদের আটক করে ইসরাইল পুলিশ।