মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

এশিয়া-ইউরোপে সমুদ্র বাণিজ্যে বেড়েছে খরচ

লোহিত সাগরে নতুন করে জাহাজে হামলার জেরে আবারও ঊর্ধ্বমুখী আন্তঃবাণিজ্যিক পরিবহন খরচ। এরই মধ্যে এশিয়া-ইউরোপে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি অর্থ।

এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করা বিশ্বের প্রধান নৌপথকে ঘিরে অনিশ্চয়তার জেরে আকাশ ছুঁয়েছে পণ্য পরিবহন খরচ। ইসরাইল-হামাস সংঘাতের জেরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে লোহিত সাগরে ২৪টি জাহাজ হামলার শিকার হয়েছে।

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব খালেদ খাইরি বলেন, 'ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এসব হামলার পেছনে কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব পক্ষকে উসকানিমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে এর কোনো বিকল্প নেই।'

আন্তর্জাতিক শিপিং মার্কেটপ্লেস ফ্রেইটোসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে এশিয়া থেকে উত্তর ইউরোপে ৪০ ফুট কন্টেইনারের প্রতিটির ভাড়া দ্বিগুণের বেশি বেড়ে চার হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। আর এশিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে কন্টেইনারের ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৭৫ ডলারে।

ফ্রেইটোসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পণ্য পৌঁছাতে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে ৪০ ফুট কন্টেইনারের ভাড়া ছয় হাজার ডলার ছাড়াবে বলে জানিয়েছে কয়েকটি শিপিং প্রতিষ্ঠান। এরসঙ্গে সারচার্জ বাবদ খরচ ৫০০ ডলার থেকে সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে ২ হাজার ৭০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। সবমিলিয়ে একেকটি কন্টেইনারের ভাড়া সামর্থ্যের বাইরে চলে যেতে পারে অনেক ব্যবসায়ীর।

সুয়েজ খাল হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও হামলার আশঙ্কায় গেলো মাসেই লোহিত সাগর থেকে ঘুরে বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছায় ২১ লাখের বেশি কন্টেইনারবাহী কমপক্ষে ১৫৮টি জাহাজ। একেকটি কন্টেইনারে গড়ে ৫০ হাজার ডলারের পণ্যের হিসাবে সবমিলিয়ে অঙ্কটি ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি।

করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে আগে থেকেই টালমাটাল বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন। এর ওপর সুয়েজ খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ঘিরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় পথ বদলাতে বাধ্য হচ্ছে প্রধান সব শিপিং প্রতিষ্ঠান। আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত হয়ে বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগছে ২০ দিনের বেশি সময়। ফলে কন্টেইনারবাহী জাহাজের ঘাটতি বাড়ছে বন্দরে, আটকা পড়ছে বিপুল পরিমাণ পণ্য।

জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী উপ-প্রতিনিধি জেমস কারিউকি বলেন, 'মিত্র ও সহযোগীদের সঙ্গে কূটনীতির মাধ্যমে সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা। লোহিত সাগরে অবাধ জাহাজ চলাচল নিশ্চিতে প্রয়োজনে কঠিন পদক্ষেপ নিতেও দ্বিধা করবো না।'

শুধু এশিয়া থেকে ইউরোপ বা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেই নয়, পণ্য পরিবহন ভাড়া বেড়েছে এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলেও। এ পথে ৪০ ফুট কন্টেইনারের ভাড়া ৫৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় চার হাজার ডলারে পৌঁছেছে। লোহিত সাগর এড়িয়ে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পণ্য পৌঁছাতে গুণতে হচ্ছে আগের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি খরচ বা প্রায় পৌনে তিন হাজার ডলার।

গেলো মঙ্গলবারও লোহিত সাগরে হুতিদের ছোঁড়া দু'টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংস করে দেয় টহলরত মার্কিন ডেস্ট্রয়ার জাহাজ। একই সময়ে একটি বাণিজ্যিক জাহাজে আঘাত করে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র।

এসএস