স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসিকে আরও সাবধান হতে আহ্বান স্টারমারের

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার | ছবি: রয়টার্স
0

প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের একটি ভাষণ বিকৃত বা ভুলভাবে সম্পাদনা করার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে বিবিসি। তবে ট্রাম্পকে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়নি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। ট্রাম্প প্রশাসনের চিঠির জবাবে বিবিসি জানায়, এটি ছিল অনিচ্ছাকৃত ভুল। আর হোয়াইট হাউজ বলছে, বিবিসি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ কাজ করেছে। স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসিকে আরও সাবধান হওয়ার কথা বললেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হিলের দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে আছে। প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে লড়াই চালিয়ে যান ট্রাম্প। এক পর্যায়ে ট্রাম্পের সমর্থকেরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ঢুকে পড়ে ক্যাপিটল হিলের ভেতর। ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ কংগ্রেস ভবনে।

ট্রাম্পের বিদায় এবং বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে হোয়াইট হাউজের মসনদে বসানোর সব প্রস্তুতি সারেন আইন প্রণেতারা। জনতার উদ্দেশে দেয়া ট্রাম্পের ভাষণের পরই মূলত হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। তবে সেই বক্তব্যে ক্যাপিটল হিলে হামলা ও দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য দেননি ট্রাম্প।

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, ট্রাম্পের সেই বক্তব্যকে এডিট করে বিকৃত বা ভুলভাবে উপস্থাপন করে। সম্প্রতি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে বিবিসির অভ্যন্তরীণ একটি নথি ফাঁস হয়। সেখানেই উঠে আসে প্যানোরামা তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিবিসি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের দুটি অংশ এমনভাবে জোড়া লাগানো হয়েছে, দেখলে মনে হবে ক্যাপিটল হিলে হামলার তার সমর্থকদের উস্কে দিচ্ছেন। যেখানে অডিও যুক্ত করা হয়, ‘সর্বশক্তি দিয়ে আমরা সবাই ক্যাপিটল হিলের দিকে যাবো।’ একই ভাষণের অন্য অংশের অডিও কেটে এনে এখানে জুরে দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় শুরু হয় তোলপাড়। বিপাকে পড়ে বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য গণমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন বিবিসি। বিবিসির সমালোচনায় মাতে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউজ বিবিসিকে শতভাগ ভুয়া এবং অপপ্রচারের যন্ত্র হিসেবে মন্তব্য করে।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন ল্যাভিট বলেন, ‘বিবিসির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিবাচক নন। তিনি স্পষ্ট করেছেন বিবিসি একটি বামপন্থী সম্প্রচার মাধ্যম। যা দুর্ভাগ্যবশত ব্রিটিশ করদাতাদের ভর্তুকি দিয়ে চলে। ট্রাম্পের মতে যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এবং অসৎ পথে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পাদনা করেছে। যা স্পষ্টতই ভুয়া খবর ছিল।’

আরও পড়ুন:

গেল সোমবার কারণ দর্শানোসহ ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ের হুমকি দিয়ে বিবিসিকে চিঠি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। চিঠির জবাবে ভিডিও ক্লিপটি ভুলভাবে সম্পাদনের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করে বিবিসি। তবে মানহানির অভিযোগ আনার মতো কোনো ভিত্তি নেই দাবি করেন বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ। এছাড়া হোয়াইট হাউজে ব্যক্তিগত একটি চিঠিতে পাঠিয়ে ট্রাম্পের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। প্রামাণ্যচিত্রটি পুনঃপ্রচার হবে না বলেও নিশ্চয়তা দেন।

এদিকে বিবিসিকে নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। জবাবে তিনি জানান, বিবিসিকে নিরপেক্ষ ও সত্য খবর প্রকাশে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে।

কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই, শক্তিশালী এবং স্বাধীন বিবিসিতে আমি বিশ্বাস করি। কেউ কেউ চায় না বিবিসির অস্তিত্ব থাকুক। ভুল তথ্যের যুগে, নিরপেক্ষ ব্রিটিশ সংবাদ পরিষেবার পক্ষে যুক্তি আগের চেয়েও শক্তিশালী এবং যেখানে ভুল হয়, সেখানে তাদের অবশ্যই আগে নিজেদের ঠিক করতে হবে। বিবিসিকে অবশ্যই আগে নিজেদের ঠিক করতে হবে। বিবিসিকে অবশ্যই নিজেদের ঠিক করতে হবে এবং ভুলগুলো দ্রুত সংশোধন করতে হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্যের পাবলিক ব্রডকাস্টার বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে বহু বাধা অতিক্রম করতে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কারণ বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন হলেও, এতে ট্রাম্প আর্থিকভাবে ও সুনামের দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তার স্পষ্ট প্রমাণ নেই।

ব্রিটিশ আইনজীবী প্রতীক সোয়াইকা বলেন, ‘বক্তব্য সম্পাদনায় ট্রাম্প ক্ষতিগ্রস্ত নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন এই ভাষণ সম্পাদনা করায় তার সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আর্থিকভাবে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে তার। একজন রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্ষতির মূল্যায়ন করা হবে সেই রাজনীতিবিদের নির্বাচনে সাফল্যের উপর ভিত্তি করে । গত মার্কিন নির্বাচনের আগে বিবিসি এই ভাষণটি প্রকাশ করেছিল । যদি ট্রাম্প সেই নির্বাচনে সফল হন, তাহলে ট্রাম্পের পক্ষে সেই নির্বাচনে জয়লাভের পর ক্ষতির মামলা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।’

এ ঘটনায় এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা প্রধান ডেবোরা টার্নেস।

এসএস