ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে দাঁড়ানো, কর নিয়ে বিতর্কিত অবস্থান, আয়ের স্থবিরতা, জীবনযাত্রার মান নেমে যাওয়াসহ বিনিয়োগে ভাটা- গেল ১৪ বছরের শাসনামলে কনজারভেটিভ পার্টির ব্যর্থতার তালিকাটা বেশ লম্বা। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ব্রিটেনকে আবারও আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের জন্য মোটেও সহজ হবে না।
হাজারটা চ্যালেঞ্জ থাকলেও পরিবর্তন আনার আভাস দিয়েছেন স্টারমার। অঙ্গীকার করেছেন, সততা আর নিষ্ঠার সাথে জনগণেররপ্রত্যাশা পূরণে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, 'প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হলে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। দেশকে পুনরুজ্জীবিত করতে যে-সব পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে। আপনার পরিচয় যাই হোক না কেন, কঠোর পরিশ্রম করলে এবং আইন মেনে চললে- দেশ আপনার পাশে দাঁড়াবে। যুক্তরাজ্য প্রতিটি নাগরিকের অবদার স্বীকার করে। আমাদের এই নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।'
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বাজেট ঘাটতি, ভঙ্গুর অবকাঠামো, আবাসন সংকট, স্বাস্থ্যসেবার বিপর্যয়- লেবার পার্টির সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। তবে সবচেয়ে বড় সংকটের নাম বেকারত্ব। দেশটিতে ১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সি কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৪২ মিলিয়নের বেশি। আর শারীরিক জটিলতার কারণে কাজ থেকে বিরত আছেন প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ। চলমান এই সংকটের রাতারাতি কোনো সমাধান না মিললেও একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে গত কয়েক বছরে অনেকেই সহায়তা প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এসব অঞ্চলে সরকারি সহায়তা পান অন্তত ৬৭ লাখ মানুষ। ফলে কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে লেবার পার্টিকে।
নির্বাচনের আগে থেকে অর্থনীতির চাকা সচল করার বিষয়ে নানা পরিকল্পনার ঘোষণা দেন লেবার পার্টির নেতারা। জনকল্যাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিল্পখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন কৌশল অবলম্বনসহ বেশ কিছু নীতি সংস্কারের ইঙ্গিত দেন তারা। এছাড়া ঋণে জর্জরিত দেশকে উদ্ধার করতে সরকারি ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা আছে লেবার পার্টির। অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় সুনাক প্রশাসনের রুয়ান্ডা নীতি বদলানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্টারমার।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলকে গোটা ইউরোপের অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। বলছেন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় লেবার পার্টির স্বাধীন অর্থনীতি বিষয়ক পরিকল্পনা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বেরেনবার্গ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হোলগার স্মিডিং বলেন, 'যুক্তরাজ্যের নির্বাচন ইউরোপের জন্য স্বস্তির। যারা ব্রেক্সিট সমর্থন করেছিলেন তাদের জন্যই ব্রিটেনের অর্থনীতির এই বেহাল দশা। তাদের পতন হয়েছে। যুক্তরাজ্য হয়তো জোটে ফেরত যাওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোর সাথে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক উন্নত হবে।
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক টিম বেল বলেন, 'প্রশ্ন হচ্ছে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে লেবার পার্টি অর্থ পাবে কোথা থেকে। আবাসন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, কারখানা নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে তারা স্বাধীন নীতির প্রস্তাব করেছে। এসব প্রকল্প থেকে কর ও রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা কিছুটা সচল হতে পারে।'
তবে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিলেও স্টারমারের জন্য কাজটা মোটেও সহজ হবে না বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। তাই, ভোটারদের রায়ে পাশ করলেও আগামী ৫ বছর লেবার পার্টির সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় পরীক্ষা।