বন্যা-ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু ৫৬, থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়ায় প্রাণহানি বেড়ে ১৮৩

শ্রীলঙ্কায় বন্যা পরিস্থিতি
শ্রীলঙ্কায় বন্যা পরিস্থিতি | ছবি: আল জাজিরা
0

প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা ও ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় মারা গেছে অন্তত ৫৬ জন। বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত বলে বন্ধ সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগ। এছাড়া বন্যায় থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৮৩ জনে, থাইল্যান্ডের দক্ষিণেই বন্যাকবলিত ৩৫ লাখ মানুষ। পরিস্থিতি নাজুক ফিলিপিন্স আর মালয়েশিয়াতেও।

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার প্রভাবে বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কা। একদিনের ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশটি। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে মারা গেছে বহু মানুষ। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি দেশটির পার্বত্য অঞ্চলে। ভূমিধসে চাপা পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। এখনো নিখোঁজ অনেকে।

ভারী বৃষ্টিতে বেশিরভাগ জলাধার ও নদী উপচে প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। এমন অবস্থায় শুক্রবার একদিনের জন্য বন্যাকবলিত এলাকায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভূমিধসের শঙ্কা এবং রেললাইন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ট্রেন চলাচল। ভূমিধসে ও গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশকিছু অঞ্চল। বন্ধ করা হয়েছে বিমান চলাচলও।

এরইমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, বিরোধী নেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েক। পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

শ্রীলঙ্কান আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক আথুলা করুণানায়েক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি শ্রীলঙ্কার উপকূলের খুব কাছাকাছি চলে আসায় আবহাওয়া পরিস্থিতি এত বাজে পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আরও একদিন বৃষ্টি হতে পারে।’

দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় আটকা পড়েছেন অনেক বাসিন্দা। হেলিকপ্টারে লোকজনকে বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে প্রায় ৪৫ হাজার বাসিন্দা।

কয়েকদিনে ভারী বৃষ্টিতে বন্যায় থাইল্যান্ডে প্রাণহানি অর্ধশত ছাড়িয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ১২টি প্রদেশে টানা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ৩০ লাখ বাসিন্দা। ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। কিছু অঞ্চলে পানি কমলেও স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন।

আরও পড়ুন:

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা এখানে আটকা পড়েছিলাম। ঘুমাতে পারছিলাম না। খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা এখান থেকে উদ্ধার হতে পারবো চিন্তা করিনি।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা সময়মতো বেরিয়ে আসতে পারিনি। হুট করেই বন্যার পানি চলে এসেছে।’

বন্যায় বিপর্যস্ত ফিলিপিন্সের বেশকিছু শহর। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, বন্যা মোকাবিলার নামে সরকারি কর্মকর্তা বিপুল টাকা লুট করেছেন। সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলো।

স্থানীয় মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের ক্ষোভ দেখানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। দুর্যোগ মোকাবিলার নামে বিপুল অর্থ দুর্নীতি করা হয়েছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘জনগণ ক্ষুব্ধ, ফিলিপিন্সের দুর্নীতি ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে না। মহামারীরর মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে প্রবল বর্ষণে আকস্মিক বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশকয়েকজন। নিখোঁজ শতাধিক মানুষ। আগামী দুই দিনে সুমাত্রা, রিয়াউসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া সংস্থা। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে হাজারও।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে মালয়েশিয়া। তলিয়ে গেছে কয়েক হেক্টর ফসলি জমি। পার্লিস ও কেদাহ রাজ্যে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ধান। দেশটির ধান উৎপাদনের সিংহভাগ আসে এই দুই রাজ্য থেকে।

এসএস