ভারী বর্ষণে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

বন্যায় আটকে পড়া অধিবাসীদের সহায়তা
বন্যায় আটকে পড়া অধিবাসীদের সহায়তা | ছবি: রয়টার্স
0

শীত মৌসুমে অনাকাঙ্ক্ষিত ভারী বর্ষণের কারণে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে থাইল্যান্ডে প্রাণ গেছে ৮ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশের অন্তত ৭ লাখ বাসিন্দা। গেলো কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা কবলিত মালয়েশিয়ার ৮ অঞ্চলে জারি হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।

থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী শহর হাট ইয়াই। গেল শুক্রবার এক দিনে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে তা গেল ৩০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে রয়টার্সের ড্রোন ফুটেজে। রাতারাতি তলিয়ে গেছে থাইল্যান্ডের ১০টি প্রদেশ।

পানিতে ডুবে বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে বেশ কয়েকজনের। অপ্রত্যাশিত এই দুর্যোগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চরম সংকটে পরেছেন অন্তত ৭ লাখ মানুষ। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেশের দক্ষিণ প্রান্ত। ২০২৪ এর নভেম্বরে শেষ সপ্তাহে এই একই এলাকায় দেখা দেয় তীব্র বন্যা। সেবার কয়েক লাখ মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে থাই প্রশাসনকে।

বন্যা কবলিত বাণিজ্যিক এলাকায় আরও পাম্প বসিয়ে পানি সরানোর কাজ আরও গতিশীল করার নির্দেশ দিয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। শহরের উপকণ্ঠে যেখানে বন্যার পানি এখনও পৌঁছায়নি, সেখানকার সড়কে বাস ও ট্রাকের লম্বা লাইন। পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ অঞ্চলেই।

দুর্গতদের উদ্ধারে অতিরিক্ত নৌকা, সরঞ্জাম ও গাড়ির ব্যবস্থা করেছে থাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর। বিপাকে পড়েছেন থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। এই খাতে বড় ধরণের ক্ষতির আভাসও দিয়েছেন পর্যটন খাত ও হোটেল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

একই পরিস্থিতি পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়ায়। সোমবার দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে জারি করা হয়েছে ভারী বৃষ্টির সর্বোচ্চ সতর্কতা। বন্যা কবলিত ৮ প্রদেশে রাতারাতি ঘরবাড়ি হারিয়েছেন ১৫ হাজার বাসিন্দা। তাদের পুনর্বাসনের জন্য খোলা হয়েছে ৯০টি অস্থায়ী ক্যাম্প।

বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে ২শ ফুট দীর্ঘ ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটেছে রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি আবাসিক এলাকা। প্রাণহানি ঠেকাতে শতাধিক ইউনিট খালি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাময়িকভাবে বন্ধ আছে রেললাইন ও মহাসড়কের অংশবিশেষ।

এক্স বার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি জানিয়েছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে সিভিল ডিফেন্স টিম। উদ্ধার অভিযানে নামানো হয়েছে ট্রাক, চার চাকার ছোটবড় গাড়ি, নৌকাসহ শতাধিক যানবাহন।

এদিকে, বন্যা ও ভূমিধ্বসে সোমবার পর্যন্ত ভিয়েতনামে অন্তত ৯১ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ বেশ কয়েকজন। পানি নামতে শুরু করলেও এখনও বিদ্যুৎহীন ১১ লাখেরও বেশি পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক এই দুর্যোগে দেশটিতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি ডলার। পানিতে তলিয়ে গেছে ২ লাখের বেশি বাড়িঘর, ২ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও ১১শ হেক্টর মাছের খামার। নিচু এলাকায় পানি থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কফি সংগ্রহের কাজ।

এএইচ