১৩ বছর বয়সী শিশু মুরাদ আরকান হাবিব। বাবার মৃত্যুতে লেখাপড়া ও খেলাধুলার বয়সেই ধরতে হয়েছে পারবারের হাল। বাবার রেখে যাওয়া স্ট্রিট ফুডের দোকানে খাবার বিক্রির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জীবন যুদ্ধ।
শিশুশ্রমের এ গল্পটি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের। নিয়তি এ বয়সেই কাঁধে উপার্যনের বোঝা চাপিয়ে দিলেও শিশু মুরাদ স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার।
মুরাদ আরকান হাবিব বলেন, ‘খাবর বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে আমি বইও পড়ি। কাজের সময়ের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যাই। আমার স্বপ্ন একজন ফুটবল খেলোয়াড় হওয়া। বাবা মারা যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য এটি ছাড়া উপার্জন উপায় ছিলো না।’
শুধু মুরাদই নয়, শিশুশ্রম নিষিদ্ধ আইন থাকা সত্ত্বেও ইরাকজুড়েই শ্রম বিক্রি করতে দেখা যায় বহু শিশুকে। যেমন বাবা অসুস্থ থাকায় ফুটপাতের অস্থায়ী পোশাকের দোকানে কাজ করছে ১২ বছর বয়সী শিশু ইয়াসের মাহমুদ। আর বাবার কর্মী নিয়োগের সক্ষমতা না থাকায় নিজেদের গাড়ি মেরামতের দোকানে কাজ করছে ১১ বছর বয়সী শিশু সাজ্জাদ আব্বাস।
সাজ্জাদ আব্বাস বলেন, ‘আমি আমার বাবার সঙ্গে কাজ করি। কারণ কর্মী নিয়োগ দিয়ে কাজ করানোর মতো সামর্থ্য নেই। তিনি স্কুলের সময় আমাকে স্কুলেও যেতে দেন।’
ইয়াসের মাহমুদ বলেন, ‘আমি স্কুলেও যাই, কাজও করি। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য রোববার, শনিবার ও শুক্রবার ছাড়া শিফটে কাজ করি। পরিবারের কঠিন সময়ে ভিক্ষার চেয়ে কাজ করা অনেক ভালো।’
মুরাদ, ইয়াসের এবং সাজ্জাদ কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করলেও বেশিরভাগ শিশু শ্রমিকের গল্প ভিন্ন। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এমন অনেক শিশু আছে যারা দরিদ্রতার কারণে নির্মাণ কাজ, গাড়ি মেরামত, ইটভাটা, বর্জ্য সংগ্রহ ও গৃহস্থালিসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। সুযোগ পাচ্ছে না পড়াশোনারও। এমনকি মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি।
ইরাক ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি ক্লেইস জোহানসন বলেন, ‘শিশুশ্রমে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সংখ্যা অনেক বেশি। এ হার ছেলেদের মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি। সে তুলনায় মেয়েদের সংখ্যাটা চার শতাংশেরও কম।’
আরও পড়ুন:
বছরের পর বছর ধরে চলমান সংঘাত এবং অর্থনৈতিক অবনতির কারণে সৃষ্ট দরিদ্রতায় শিশুরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। তাই শিশুশ্রম মোকাবিলায় আইনি সংস্কারের জন্য সরকারের সাথে একযোগে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এ আওতায় তরুণদের কাজের জন্য দক্ষ করতে প্রশিক্ষণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ক্লেইস জোহানসন বলেন, ‘আমরা সর্বনিম্ন কাজ করার বয়স ১৫ বছর এবং সকল ধরনের বিপজ্জনক শ্রমের জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করেছি। দ্বিতীয় যে কাজটি আমরা করছি তা হলো ভালো কাজে তরুণদের দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। কারণ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করেছে এবং চাকরি করতে চাইছে। তাই আমরা তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই, যা শিক্ষা উপার্জনে কাজে লাগে।’
এদিকে ইরাকে সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৫ সালেই ১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য কাজ নিষিদ্ধ এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য বিপজ্জনক কাজ না করার বিধান রয়েছে। তবে বাস্তবে আইনের প্রয়োগ খুব সামান্য। ২০২৪ সালের এক অনুসন্ধানে মার্কিন শ্রম বিভাগ জানায়, শিশুশ্রম নির্মূলে খুব বেশি অগ্রগতি নেই ইরাকে।





