গেল ১৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনালাপের পরই গুঞ্জন চাউর হয় তবে কি বাংলাদেশে আসছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক।
প্রযুক্তিপ্রেমীরা মনে করছেন, দেশে উচ্চগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে ইলন মাস্কের সঙ্গে ড. ইউনূসের আলাপ। বিশেষ করে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ সহজলভ্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক।
তবে, অনেকের মতে স্যাটেলাইট–ভিত্তিক স্টারলিংকের ইন্টারনেটের ব্যয়ের বিষয়টি নিয়ে রয়েছে কৌতূহল। সবারই মনে প্রশ্ন, স্টারলিংকের সেবা পেতে পেতে কত টাকা খরচ হবে গ্রাহকদের। যদিও এই বিষয়ে এখনও সুনিদির্ষ্ট কিছু জানায়টি প্রতিষ্ঠাটি। স্টারলিংকের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহারের জন্য প্রথমেই লাগবে একটি রিসিভার বা অ্যানটেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, ক্যাবল এবং পাওয়ার সাপ্লাই। পুরো এই কিটের দাম পড়বে ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার। পাশাপাশি স্টারলিংকের সর্বনিম্ন মাসিক ফি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য নির্ধারণ করা আছে ১২০ ডলার। আর করপোরেট গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক কিট এবং মাসিক ফি দ্বিগুণেরও বেশি।

তবে দেশ ভিত্তিতে স্টারলিংকের মূল্যে আসতে পারে পরিবর্তন। আফ্রিকার কিছু গ্রামের খুব কম খরচে সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। যার মূল্য ধরা হয়েছে ১০ থেকে ৩০ ডলার। ধারণা করা হচ্ছে সে বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য সহনীয় মূল্য নির্ধারণ করতে পারে স্টারলিংক।
শুধু বাংলাদেশ নয়, দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবাদাতা স্টারলিংককে নিজ দেশে আনার চেষ্টা করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুঞ্জন রয়েছে, ভারতে লাইসেন্স পাওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে ইলন মাস্ক। ওয়াশিংটনে ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাক্ষাৎ জোরালো হয়েছে গুঞ্জন।
ভারতে স্টারলিংকের পরিষেবা চালুর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দেশটির জনগণ। মধ্যপ্রদেশের গ্রাম থেকে শহর, প্রতিটি নাগরিকের প্রত্যাশা দ্রুততম সময়ে দেশের সব জায়গায় সহজলভ্য হবে ইন্টারনেট পরিষেবা।
এক ভারতীয় নাগরিক বলেন, ‘এখানে ইন্টারনেট আছে, কিন্তু মাঝে মাঝে কাজ বন্ধ করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। ইন্টারনেট থেকে কোন তথ্য প্রয়োজন হলে কৃষকরা তা পায় না। শিশুদের পড়াশোনা ও ব্যাংকের কাজ করতেও আমাদের সমস্যা হয়।’
আরেক ভারতীয় নাগরিক বলেন, ‘গ্রামেও আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। আজকাল যুবকেরা মোবাইলে পড়াশোনা করছে, বেশিরভাগ কাজ মোবাইলে করা হচ্ছে।’
আরেকজন বলেন, ‘প্রতিযোগিতা বাড়ানো উচিত কারণ প্রতিযোগিতা বাড়লেই আমাদের দেশের ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আরও উন্নতি করবে। যখন স্টারলিংক আসবে, তখন সবাই এটা ব্যবহার শুরু করবে। কারণ জিও, এয়ারটেল, ভোডাফোনের ইন্টারনেটের গতি কমছে।’
এদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের বাজারে ইন্টারনেট পরিষেবার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে ইলন মাস্কের স্টারলিংক।
ভারতীয় এক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘গতি এবং প্রাপ্যতা সমস্যার কারণে বর্তমানে ভারতে ইন্টারনেট এখনও সন্তোষজনক নয়, অবশ্যই উন্নতির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তৃতীয় পক্ষের সম্ভাবনা আছে। আমি মনে করি ইলন মাস্ক অবশ্যই এখানে আসতে পারেন।’
বিশ্বের বৃহত্তম টেলিকম বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ ভারত। যেখানে প্রযুক্তিখাতে আধিপত্য রয়েছে জিও, রিলায়েন্স, এয়ারটেল, এবং ভোডাফোনের। প্রায় দেড়শো কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে বর্তমানে ৮০ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। এরমধ্যে কেবল গ্রামীণ জনপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন মাত্র ৩৮ শতাংশ মানুষ।