ইরান-ইসরাইল বিরোধে ইরানের নতুন কৌশল, ট্রাম্পের সাথে পরমাণু আলোচনার সম্ভাবনা

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলের সাথে বিরোধে জড়িয়ে অক্ষশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী নিজেদের ইমেজ বদলানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ইরান। সুইজারল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সেই আভাসই পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু চুক্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনার পথ খোলা রেখেছে তেহরান।

কাতার কিংবা যুক্তরাষ্ট্র নয়, গাজাবাসীর প্রতিরোধ ও মনোবলের সামনে নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। মঙ্গলবার রাজধানী তেহরানে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মন্তব্য করেন, মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হয়েও গাজায় আধিপত্য ধরে রাখতে পারেননি নেতানিয়াহু।

এদিন, আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের বিষয়ে নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার সমালোচনা করলেও ট্রাম্পের সাথে অযথা বিরোধে না জড়াতে অক্ষশক্তিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

এর আগে, গেল বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট অব স্ট্রাটেজিক অ্যাফেয়ার্স জাভেদ জারিফ মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু চুক্তি করতে আগ্রহী তেহরান। প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প জানান, ইরানের পরমাণু সক্ষমতার ওপর ইসরাইল হামলা করার আগে তেহরান-তেল আবিব সংঘাতের নিরসন চান তিনি। টাইমস অব ইসরাইলের তথ্য বলছে, নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে পরমাণু চুক্তি বিষয়ে আলাপ করেছেন ইরানের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরাও।

চলমান এই ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনার পথ খোলা রেখেছে তেহরান। তবে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক বা ফোনালাপ হতে পারে ট্রাম্পের। দুই নেতা সশরীরে বৈঠক করবেন এমন সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

সিআইএএর সাবেক সহকারী উপ-পরিচালক পলা ডয়েল বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পেজেশকিয়ানের সাথে বসবেন না। তিনি সর্বোচ্চ নেতার সাথেই বসবেন। তবে বিষয়টি এত সহজ হবে না। কিন্তু বুঝতে পারছি না বৈঠক কোথায় অনুষ্ঠিত হবে। কারণ শেষ কবে আপনি খামেনি কে ইরানের বাইরে যেতে দেখেছেন।’

গেল দুমাস ধরে সামরিক মহড়া জারি রেখেছে তেহরান। গাজায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলেও, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঘোষণা ইয়েমেনের হুথি ও লেবাননের হিজবুল্লাহর। দুর্বলতার বদলে ইরানের সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা চলছে নানা মহলে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলের সাথে আতাতে জড়ানোর পর ইরানের অক্ষশক্তিগুলোর নাজেহাল দশা। তাই, ইমেজ বদলে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে তেহরান।

কেনেথ কার্টজম্যান মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক ইরান বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ইরানের অক্ষশক্তিগুলো একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছে। যদিও প্রতিশোধ নেয়ার মতো সক্ষমতা নেই তাদের। ইরানও নানা কথা বলছে। কিন্তু তাদের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়।’

পশ্চিমা গণমাধ্যম ইরানের সক্ষমতা নিয়ে আকার ইঙ্গিতে প্রশ্ন তুললেও, মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা দ্বিমত করছেন। তবে, তারা মনে করেন, ট্রাম্প যদি ইসরাইলকে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে ফেলেন, তাহলে নতুন করে বড় ধরনের বিপদে পড়বে তেহরান। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সামরিক সক্ষমতার প্রশ্নে ইরানকে এগিয়ে রাখলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, উন্নয়ন, নেতৃত্ব সংকট আর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়বেন খামেনীর উত্তরসূরিরা।

এএম