স্বৈরাচার বাশার আল আসাদের পতনের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সিরিয়া। বড়দিনকে স্বাগত জানাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি সেজেছে বর্ণিল সাজে। রাজধানীতে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস মার্কেট। পরিবার পরিজনের সঙ্গে রাতের দামেস্কে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ছবি তুলতেও ভুলছেন না সাধারণ সিরীয়রা।
এক অধিবাসী বলেন, ‘জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। সিরিয়া সব ধর্ম ও গোষ্ঠীর মানুষের জন্য উন্মুক্ত। আসাদের পতনের পর সবাইকে নিয়ে আমরা নতুন সিরিয়া গড়ে তুলতে কাজ করছি।’
আরেকজন বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়কে অতিবাহিত করে এসেছি। তাই কাউকে আর ভয় পাচ্ছি না। আশা করছি, সামনে আরো ভালো দিন আসবে।’
নতুন দেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অঙ্গীকার করেছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার। আল-জাজিরাকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন এই কথা।
দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পাশাপাশি নাগরিকদের চাকরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এমনকি মেয়েদের শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রেও থাকবে না কোনো বিধিনিষেধ।
সিরিয়ার নবনিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী নাজির মোহাম্মাদ আল কাদরী বলেন, ‘আমাদের এখন ৯ হাজারের বেশি স্কুল পুনর্নির্মাণ ও তৈরি করতে হবে। আসাদের স্বৈরাচারী কারিকুলাম পরিবর্তন করা হবে। সিরিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী মেয়েদের শিক্ষার্জনের অধিকার রয়েছে। আমরা এই বিষয়টি অপরিবর্তিত রাখবো।’
এদিকে বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করা আবু মোহাম্মাদ আল জুলানির পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে বিবিসি। এইচটিএস প্রধান জানান, তিনধাপে সিরিয়াকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এখন মূল লক্ষ্য সবাইকে জাতীয় সম্মেলনের আমন্ত্রণ পাঠানো।
সবশেষ সাংবিধানিক ও সংসদীয় শূন্যতা পূরণের জন্য গঠন করা হবে উপদেষ্টা পরিষদ। রাশিয়ার সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক নির্ভর করবে ৪টি 'স' এর উপর। অর্থাৎ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষা ও সিদ্ধান্তকে পুতিন সরকারের সম্মান জানানোর ওপর।
হায়াত তাহরির আল শামের প্রধান আবু মোহাম্মাদ আল জুলানি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সুসম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। তবে এক্ষেত্রে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সুরক্ষা ও সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে মস্কোকে।’
তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে কুর্দিদের সমর্থন জানাতে আসা যোদ্ধারা সিরিয়া ছেড়ে চলে যাবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন এসডিএফ কমান্ডার। কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি পিকেকের যোদ্ধাদের সিরিয়ায় অবস্থানের তথ্যও প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস।
এসডিএফের কমান্ডার মাজলুম আবদি বলেন, ‘আইএস যখন ইরাকে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে কোবানি শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো, তখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কুর্দিরা আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। ইরান, ইরাক ও তুরস্ক থেকে আসা অনেক যোদ্ধাই এখন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তাদের সহায়তায় কোবানি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় আইএস।’
আইএসকে দমনের জন্য বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন ২ হাজার মার্কিন সেনা। জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে রুখতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেন্টাগন মুখপাত্র। এদিকে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতার জন্য ইসরাইলের হামলা বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।