লেবাননে যুদ্ধ শুরুর পর বুধবার সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী জবাব দিয়েছে হিজবুল্লাহ। বুধবার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে চালানো হয় দেড় শতাধিক রকেট হামলা। এতে উত্তরাঞ্চলে কিরিয়াত শমোনা শহরে বেশ কয়েকজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
হিজবুল্লাহর রকেট সীমানা পেরোনোর পর সাইরেনের শব্দে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যান অসংখ্য ইসরাইলি। শুধু কিরিয়াত শমোনায় নয়, গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী হাইফাতেও পৌঁছে যায় হিজবুল্লাহর রকেট। অবাক করার বিষয়, শক্তিশালী অনেক রকেট প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয় ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। এসময় কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে যায়। বিপুল সংখ্যক আহতদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এদিকে হামলার পর সকল বাসিন্দাকে শহর ছেড়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। তবে লেবাননে আগ্রাসন থামানোর কোনো নামই নেই ইসরাইলের। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে বুধবার রাতে চালানো হয় আকাশ হামলা। আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণে মুহূর্তেই প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর লেবাননে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ হাজারের ওপরে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লেবাননের পরিস্থিতি গাজার মতো হতে দেয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা লেবাননের পরিস্থিতি গাজার মতো দেখতে চাই না। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আগের প্রশ্নের উত্তরের মতো আবারো বলত চাই, লেবাননের জনগণকেই ঠিক করতে হবে তাদের সরকারে কে বসবে। অন্য কেউ এটি ঠিক করে দিবেন না।’
এদিকে গাজা ও লেবাননের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে।
জাতিসংঘ বলছে, লেবাননের অধিকাংশ মানুষকেই অন্য স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশটিতে বাড়ছে মানবিক সংকট। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে জানানো হয়, গাজা দখলে তেল আবিবের কোনো পরিকল্পনা মেনে নিবে না ওয়াশিংটন।
তবে ইসরাইল জানিয়েছে, হামাস নির্মূলের মাধ্যমেই গাজা নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে নেতানিয়াহু সরকার।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘গাজা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। এটি পূরণ করা সম্ভব। তবে হামাস ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ত্রাণ লুট, সম্পদ নষ্ট ও গাজার মানুষের পরিস্থিতি দুর্বিষহ করে তুলবে। তাই হামাস নির্মূল ছাড়া এটি সম্ভব নয়।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো কয়েকমাস আগেই আমরা পূর্বাভাস দিয়েছি তবে কোনো সুরাহা হয়নি। এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে ইসরাইলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুদ্ধের এক বছর পেরিয়ে গেলেও গাজায় আরো শক্তিশালী ভাবে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। শুধু বুধবারই উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৬৪ ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে অধিকাংশ নিহত হয়েছেন ইয়েমেন আল সাঈদ হাসপাতালে চালানো হামলায়। সরাসরি আক্রমণে হত্যা করা হয়েছে কয়েকজন সাংবাদিককে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গেল একবছরে তাদের স্থাপনায় আশ্রয় নেয়া প্রায় ৬০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ইসরাইলের হামলায়।
আগামী ২৪ অক্টোবর লেবানন পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করবে ফ্রান্স। বৈরুতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তার পাশাপাশি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে গাজা যুদ্ধ নিয়েও।