দু'বছর আগে শ্রীলঙ্কায় গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাসকে যখন পালিয়ে যান, মুখ থুবড়ে পড়া দেশটির হাল ধরেন রনিল বিক্রমাসিংহে। মূল্যস্ফীতি কমানো থেকে শুরু করে রিজার্ভ বাড়ানো- লংকান অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সবরকম চেষ্টাই করেন তিনি। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সংকট থেকে শ্রীলঙ্কাকে বের করে আনার কৃতিত্ব দাবি করে আরও একবার দেশ চালানোর সুযোগ খুঁজছেন ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।
আগামী ৫ বছরের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ যাচ্ছে কার দখলে, এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে নানা মহলে। ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবেন রেকর্ড ৩৮ জন প্রার্থী, যাদের মধ্যে ৫ জন লড়বেন লংকান মসনদের সর্বোচ্চ আসনের জন্য। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের পর নির্বাচনী কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছে অরাজনৈতিক সংগঠন, সেন্টার ফর মনিটোরিং ইলেকশন ভায়োলেন্স-এর কর্মকর্তারা। তবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ জানায় সংস্থাটি।
কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন জানান, যদি সহিংসতার বিষয়ে বলি, বিগত বছরের তুলনায় এ ধরণের ঘটনা কম চোখে পড়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সম্পদের অপব্যবহার- বিষয়টি গুরুতর। সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তিগত প্রচার মতো কাজে ব্যবহার করেন, তাহলে এটি নির্বাচনকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
যদিও বুধবার শেষ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে জয়ের ব্যাপারে সমান আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, এনপিপি জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অনুরা কুমারা দিশানায়েক ও প্রধান বিরোধীদল এসজেবি'র সাজিথ প্রেমাদাসা। সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে সাজিথের থেকে মাত্র ৪ শতাংশ জনসমর্থনে এগিয়ে অনুরা কুমারা দিশানায়েক।
এসজেবির বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, 'ইন্টালিজেন্স এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে আমরা ২০ লাখ ভোটের ব্যবধানে জিততে যাচ্ছি। রনিল বিক্রমাসিংহে ও অনুরা কুমারা দিশানায়ক- রাজনৈতিক সম্পর্কে যমজ দুই ভাই আমার পেছনে পড়েছেন।'
বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জেভিপির নেতা অনুরা কুমারা দিশানায়েক বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ ন্যায় ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে লড়াই করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিগত দশক ধরে চেষ্টা করেও আমরা জয়ী হতে পারিনি। আমরা বিশ্বাস করি, ২১ সেপ্টেম্বর আমাদের জন্য সেই বিজয় অপেক্ষা করছে।'
২০১৯ সালে দেশটির প্রধান বিরোধী দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে হেরে যান। এবারের জরিপে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সংস্কারপন্থীদের অনেকেই চাচ্ছেন কুমারা দিশানায়েকের হাত ধরে ক্ষমতায় আসুক বাম ঘরাণার একটি দল। দিনশেষে টাইটানিকের মতো ডুবতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধারের গুরুদায়িত্ব কার ওপর বর্তায় এখন সেদিকেই তাকিয়ে লংকানরা।