সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার দেশ জাপানের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রধান খাদ্য ভাত। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশটিতে বছরে মাথাপিছু ভাত খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ৫০ কেজি। গেলো জুন পর্যন্ত এক বছরে জাপানে চালের চাহিদা ছিল ৭০ লাখ টনেরও বেশি।
ঠিক এমন সময়েই খরা-বন্যার মতো চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে জাপান। টাইফুন শানশানের প্রভাবে অতিবৃষ্টি-বন্যার কবলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অথচ গেল বছরের খরা-বন্যার ক্ষত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। তাপমাত্রার তীব্রতা আর দাবদাহের স্থায়িত্ব বাড়তে থাকায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ শস্য, যার মধ্যে অন্যতম চাল। ২০২৩ সালে দীর্ঘ দাবদাহের জেরে জাপানে চালের মজুত বর্তমানে শতকের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে চাহিদার তুলনায় ব্যাপক ঘাটতির কারণে বাজারে বাড়তে থাকে চালের দাম।
স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'আমার দোকানে অন্যান্য বছরের তুলনায় চালের মজুত এবার অর্ধেকেরও কম। অন্যান্য বছর বাজারে সুলভ অনেক ধরনের চাল এবার বাজারে ওঠেইনি। চালের সংকট অনেক। অনেকেই সস্তা বিকল্প খুঁজছেন বাজারে।'
২০২৪ সালেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছর ইতিহাসের উষ্ণতম জুলাই পার করেছে জাপান। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নতুন তাপ-প্রতিরোধী চাল নিয়ে গবেষণা শুরু করছেন জাপানের কৃষিবিদরা। চালের ঘাটতি কমাতে দেশটির সবচেয়ে উত্তপ্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সাইতামার স্থানীয় প্রশাসন বিজ্ঞানের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে তাপমাত্রা সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন প্রকল্পের কাজ।
জাপানের রাইস ব্রিডিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক নাওতো ওওকা বলেন, 'দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপ প্রতিরোধী উপাদান আছে, এমন বিভিন্ন জাতের ধান নিয়ে ক্রসব্রিডিংয়ের কাজ করছি আমরা।'
গোটা জাপান থেকে বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ সংগ্রহের পর সেগুলোর মধ্যে পরাগায়ন ঘটিয়ে উচ্চ তাপ সহিষ্ণু ধানের ভিন্ন জাত তৈরির চেষ্টা করছেন গবেষকরা। সবশেষ চলতি বছর 'ইমিহোকোরো' নামে এক জাতের ধান উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন তারা, যেটি আগে উদ্ভাবিত অনেক জাতের ধানের তুলনায় প্রতিকূল পরিবেশে তুলনামূলক উচ্চ গুণগত মানের চাল উৎপাদনে সক্ষম।
জাপানের একজন কৃষক বলেন, 'দিন দিন গরম বাড়ছে। তাই উচ্চ তাপমাত্রা প্রতিরোধী জাত ছাড়া ভবিষ্যতে চাল উৎপাদন আরও কঠিন হবে।'
জাপানে মোট খাদ্যপণ্যের চাহিদার ৬০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। হাতেগোণা কয়েকটি নিত্য খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল একটি, যার চাহিদা মেটে দেশটির নিজস্ব উৎপাদনেই।