ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিল পাসে একদিন আগেই বিধানসভায় অভূতপূর্ব একাত্মতা দেখায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস আর বিরোধী বিজেপিসহ সব দল। কিন্তু ন্যায়বিচারের দাবিতে নাগরিক আন্দোলনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আন্দোলনকারীরা।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ আগস্টের ঘটনার পর নারীদের রাত দখল থেকে শুরু করে মাসব্যাপী বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচিত মুখেরা ছিলেন পেছনের সারিতে। সামনে এসে পড়লেও অরাজনৈতিক মোড়কে থাকতে বাধ্য হন তারা। আন্দোলনের এ পর্যায়ে তৃণমূল-বিজেপি-কংগ্রেস থেকে শুরু করে বাম ও অন্যান্য দলগুলোর নেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন নিহত চিকিৎসকের সহকর্মী, এমনকি সাধারণ বিক্ষোভকারীরাও। রাজনীতিবিদদের হাত থেকে এক ফোঁটা পানি পানেও রাজি নন রাতভর ধর্নারত চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের চাপে সড়ক থেকে নয় ফুট উঁচু লোহার গারদ সরাতে বাধ্য হয় পুলিশ। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেন চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত বিভিন্ন পেশাজীবীরা। নিহতের জন্য ন্যায়বিচার আর চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে বুধবারও কর্মসূচি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকদের। যোগ দেবেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা এবং প্রবীণ চিকিৎসকরাও। কয়েক দফা দাবির মধ্যে অন্যতম আরজি কর কাণ্ডে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ।
একজন চিকিৎসক বলেন, 'হয় পুলিশ কমিশনার নিজে এখানে আসবেন, না হয় আমাদের তার কাছে যেতে দিতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টা যত সময়ই লাগুক না কেন। আমরা চিকিৎসক। খাবার-ঘুম ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপারেশন থিয়েটারে থাকতে আমরা অভ্যস্ত। দাবি আদায় পর্যন্ত এখানেও অবস্থান চালিয়ে যাবো।'
এদিকে, ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন, কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দ্বীপ ঘোষকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিভাগ। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় আসামি করা হলেও তার পেছনে আছে আরও বড় চক্র, বলছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানের জন্য তাকে আটদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
সিবিআই সূত্রে দাবি, আরজি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের পরপরই একটি বিদেশি সিম থেকে সন্দ্বীপসহ হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিদের কাছে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়, দিনভর কথাও চলে। অপরাধের পর তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার সঙ্গে ওই সিম ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।
অন্যদিকে, আরজি কর হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি মর্মে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের বিরুদ্ধে অবমাননার মামলা হবে কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি বৃহস্পতিবার।