এশিয়া
বিদেশে এখন
0

টালমাটাল অবস্থায় থাইল্যান্ডের রাজনীতি

এক সপ্তাহে সাংবিধানিক আদালতের দুই রায়ে বিপর্যস্ত থাইল্যান্ডের রাজনীতি। নৈতিকতা লঙ্ঘনের দায়ে পদ হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভাসিন। অন্যদিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাবল লক গণতন্ত্রে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করছে সামরিক বাহিনী, রক্ষণশীল ও রাজতন্ত্রপন্থীরা। এতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটির অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে রকেট গতিতে।

ইতিহাস পুনরাবৃত্তির কথা কালেভদ্রে শোনা গেলেও থাইল্যান্ডে এটি প্রায়শই হয়ে থাকে। নৈতিকতা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার (১৪ আগস্ট) দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শ্রেথা থাভিসিনকে অপসারণ করেছেন থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত। ২০ বছরের মধ্যে দেশটিতে এমন ঘটনা ঘটলো পঞ্চমবারের মতো।

শুধু প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণই নয়, চলতি সপ্তাহে একই আদালতের আরেক রায় ঘুরিয়ে দিয়েছে দেশটির রাজনীতির সমীকরণ। ২০২৩ সালের সবশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ আসন পায় মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোট। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকলেও জোটের নেতা পিটা লিম-জারোয়েন-রাত আটকে যান সামরিক বাহিনী ও রক্ষণশীল নিয়ন্ত্রিত সিনেটের ভোটে। থাইল্যান্ডের প্রাচীন রাজকীয় মানহানি আইন সংস্কারের অভিযোগে এ সপ্তাহে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন সাংবিধানিক আদালত। রাজনীতিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পিটাকে দেয়া হয়েছে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

এমন পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডকে ডাবল লক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে অভিহিত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, থাইল্যান্ডে সামরিক বাহিনী ও রাজতন্ত্রপন্থিদের বিরাগভাজন হয়ে কোনো সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। প্রথমে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে পতন ঘটানো হয় গণতান্ত্রিক সরকারকে। এ চেষ্টা ব্যর্থ হলে চলে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ।

থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রজাক কংকিরাটি বলেন, 'সাংবিধানিক আদালতকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে রাজনীতির সমতা নষ্ট হয়। আমার মতে এটি অভ্যুত্থানের নতুন চেষ্টা। প্রথাগত পদ্ধতিতে ট্যাংক বা সেনা নামিয়ে ক্যু হয়নি। বরং নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সাংবিধানিক আদালত।'

ইতিহাস বলছে, ১৯৩২ সাল থেকে থাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়েছে অন্তত ১৯ বার। এবারের চেষ্টাকে জুডিশিয়ারি ক্যু বলছেন অনেকেই। তবে, এক বছরের ব্যবধানে সরকারপ্রধানকে অপসারণের ঘটনায় খুব একটা অবাক হননি থাইল্যান্ডের সাধারণ জনগণ।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমি রাজনীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না। অনেক বেশি আশ্চর্যও হয়নি। কারণ এই দেশের নাম থাইল্যান্ড। মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ থাইল্যান্ডের নোংরা রাজনীতির অংশ।'

এই যখন অবস্থা, তখন রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে খাদের কিনারায় থাইল্যান্ডের অর্থনীতি। চলতি বছরই দেশটি থেকে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বিদেশিরা। শামুক গতিতে চলছে অর্থনীতি। দেশের জিডিপির সঙ্গে ঋণের অনুপাত এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা দেশটির পুঁজিবাজারে চলতি বছর দরপতন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। অর্থনীতি পুনরুত্থানে তাই দ্রুতই রাজনৈতিক সংকট নিরসনের আহ্বান সাধারণ থাইবাসীর।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর