যুদ্ধ , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

সংঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত রাখাইন রাজ্য

বিদ্রোহী আরাকান আর্মি আর সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্য। জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সংঘাতকে গণহত্যা উল্লেখ করে দ্রুত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, রোহিঙ্গাদের জন্য রাখা সামগ্রী লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের উপকূলীয় রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে চলছে লুটপাট, পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে খাবার আর পোশাকের দোকান। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এমন অভিযোগ করলে সতর্কবার্তা দেয় বার্মিজ রোহিঙ্গা সংস্থা যুক্তরাজ্য। কারণ এই শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গারা। বিদ্রোহী আরাকান আর্মি আর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সংঘাতে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা পড়েছে মানবেতর পরিস্থিতিতে। রাখাইনের বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে আরাকান আর্মি, লক্ষ্য রাখাইন দখল।

জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে হামলার জন্য মংডু শহর থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আরাকান আর্মি। তবে জাতিসংঘ বলছে, এই রাখাইনে বসবাসকারী লাখ লাখ রোহিঙ্গার পালানোর কোন জায়গা নেই। রোহিঙ্গাদের সবসময় বহিরাগত হিসেবে বিবেচনা করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকারসহ বেশিরভাগ বৌদ্ধ নাগরিক। ২০১৭ সালে মর্মান্তিক সেনা অভিযানের কারণে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এখন এই বিষয়টিকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বার্মিজ রোহিঙ্গা সংস্থা ইউকে– ব্রউক বলছে, গেলো বছরের অক্টোবরে আরাকান আর্মি আর জান্তা সেনাবাহিনীর মধ্যে চলা সংঘাতে জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে রাখাইনের অন্তত ৬ লাখ রোহিঙ্গা। সেনাবাহিনী শুরু থেকেই রোহিঙ্গা আছে এমন এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাবার, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করছে এমন অভিযোগও উঠেছে, মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, শিশুসহ প্রাপ্তবয়স্ক রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করতে সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে।

ব্রউক জানায়, সেনাবাহিনী আর আরাকান আর্মিক, দুই পক্ষই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা করছে, সেটা যুদ্ধাপরাধের সামিল। তারা বলছেন, রাখাইনে যারা আটকে পড়েছেন তারা হয়তো না খেয়ে ধীরে ধীরে মরবে, না হয় দুই পক্ষের সংঘাতে প্রাণ হারাবে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আবারও অন্যায় শুরু হয়েছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ বলেও অভিযোগ জানিয়েছে ব্রউক। গেলো ছয় মাসে এই কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গার প্রাণ গেছে।

এরমধ্যে ২ লাখের মতো রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যাদের দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, আর ১১ হাজার রোহিঙ্গা আটকে পড়েছেন রাখাইনের রাজধানী সিতওয়েতে, সংঘাত চলায় সেখান থেকে পালানোর তাদের কোন উপায় নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নীতি অনুযায়ী, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা বন্ধ করতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানায়, মংডুতে সংঘাতের কারণে ওয়্যারহাউজগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ। সম্প্রতি ওয়্যারহাউজে আগুন লাগিয়ে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী লুট করা হয়। অথচ এখানে ৬৪ হাজার মানুষের এক মাসের হিসেবে ১ হাজারের বেশি টন খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী মজুত ছিলো। জাতিসংঘ বলছে, চলমান সংঘাতে রাখাইনের মংডু আর প্রতিবেশী বুথিডং শহর ছেড়েছেন ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর