গেলো ৬ মে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা পৌঁছায় তুঙ্গে। একদিনে ২৩৩ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছিল সেদিন, যা ঠিক এক বছর আগের একই দিনে ছিল ২২২ গিগাওয়াটের কম। ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রচণ্ড গরমে দেশজুড়ে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যবহার। আগামী মাসে দেশটিতে দিনের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার পৌঁছাতে পারে ২৪০ গিগাওয়াটে।
গ্রীষ্মের শুরুতেই ভারতের বড় অংশ দাবদাহের কবলে পড়লেও তুলনামূলক শীতল ছিল দিল্লি। এবার তাপপ্রবাহে নাকাল দিল্লিবাসীও। শুক্রবার (১৭ মে) থেকেই বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা, যা রোববার (১৯ মে) পৌঁছায় সর্বোচ্চে। সে দিন দিল্লির নাজাফগড়ে তাপমাত্রার পারদ পৌঁছেছিল ৪৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উত্তর প্রদেশের পশ্চিমে আগ্রায় তাপমাত্রা ছিল ৪৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয় একজন বলেন, পানি খেয়ে খেয়ে গরমে সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি। গরমের আঁচ থেকে বাঁচতে ভোর ৫টা, সাড়ে ৫টায় কাজে চলে আসি। বেলা ১১টা, সাড়ে ১১টার মধ্যে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে যাই। সূর্যের তাপ একটু কমলে আবার ৩টার দিকে কাজে আসি।'
চরম আবহাওয়ার কারণে দিল্লিতে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা হিসেবে কমপক্ষে পাঁচদিনের জন্য 'রেড অ্যালার্ট' জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। ১১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব স্কুল বন্ধ রেখেছে দিল্লি শিক্ষা অধিদপ্তর। অবলা প্রাণীদের গরমের কষ্ট কমাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লির চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
মধ্য প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, গুজরাট, হরিয়ানা, চন্ডিগড়, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল, বিহার, সৌরাষ্ট্র, কুচসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। রাজস্থান আর হিমাচল প্রদেশের কিছু অংশেও গরমে নাকাল বাসিন্দারা। অন্তত আরও কয়েকদিন গরমের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। চলতি মাসে আট থেকে ১১টি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কবলে পড়া অন্যতম দেশ ভারতে, দিনে ও রাতে উষ্ণতার স্থায়িত্ব ও তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। যা ২০৫০ সাল নাগাদ দুই থেকে চারগুণ বাড়বে বলে রয়েছে পূর্বাভাস। দাবদাহও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আগে আগে শুরু হবে। বাড়বে সংখ্যা আর স্থায়িত্বও।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ২২ হাজারের বেশি মানুষ। গবেষকদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।